ইসলাম

রমজানে কোরআন পাঠে অধিক সওয়াব

কোরআন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ। মানুষের হেদায়েতের আলোকবর্তিকা। কোরআন মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে ফিরিয়ে আনে। মানুষকে বাতলে দেয় মহাসফলতার পথ। কোরআনের বাতলানো পথে চলে মানুষ দুনিয়ায় যাপন করে কলুষমুক্ত জীবন এবং পরকালে অধিষ্ঠিত হয় জান্নাতের সর্বোচ্চ আসনে।

রমজানকে বলা হয় কোরআনের মাস। কেননা রমজান মাসে কোরআনের অবতরণ শুরু হয়েছে। প্রথমে পবিত্র কোরআন রমজান মাসের কদরের রাতে সপ্তম আকাশের লাওহে মাহফুজ থেকে দুনিয়ার আকাশে একত্রে নাজিল হয়েছে। সেখান থেকে আবার রমজান মাসেই অল্প অল্প করে রাসুল (সা.) এর প্রতি নাজিল হওয়া শুরু হয়েছে। প্রথমে একত্রে নাজিল এবং পরবর্তী সময়ে অল্প অল্প করে নাজিল- উভয়টিই রমজান মাসে হয়েছে।

কোরআন ও রমজান যেন একই সূত্রে গাঁথা। কেননা দুটির উদ্দেশ্য একই। বান্দাকে হেদায়েতের পথে চালিয়ে মহান আল্লাহর নিকটবর্তী করে রাখা এবং পরকালে জান্নাতে পৌঁছে দেয়া।

রমজান মাসে রোজা ফরজ হয়েছে এবং পবিত্র কোরআনের নাজিল শুরু হয়েছে। তাই এ মাসের মর্যাদা বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃদ্ধি পেয়েছে এই মাসে অন্যান্য নেক কাজের প্রতিদানও। হাদিসের ভাষ্যমতে, অন্যান্য মাসের তুলনায় এই মাসের প্রতিটি নেক কাজে সত্তর গুণ বেশি সওয়াব দেয়া হয়। তাই বহু মর্যাদাসম্পন্ন পবিত্র এই রমজান মাসে বেশি বেশি নেক ও উত্তম কাজ করা চাই। আর পবিত্র কোরআনের তেলাওয়াত অত্যন্ত নেক কাজ এবং ইবাদত হিসেবে উত্তম। কোরআনের প্রতিটি হরফ পাঠের বিনিময়ে দেয়া হয় দশটি করে নেকি।

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কুরআনের একটি হরফ পাঠ করবে তার একটি নেকি হবে। আর প্রতি নেকি হয় দশ গুণ হিসাবে। আমি বলি না যে, আলিফ, লাম ও মিম মিলে একটি হয়ফ। বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ এবং মিম আরেকটি হরফ।’ মিশকাত ২১৩৭

এই হিসেবে রমজান মাসে কোরআনের প্রতিটি হরফ পাঠের বিনিময়ে দেয়া হবে সাতশ’ করে নেকি। তাই কোরআন নাজিলের মাস রমজানে বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত কাম্য। রাসুল (সা.) অন্যান্য মাসের তুলনায় রমজান মাসে অধিক পরিমাণে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। নাজিল হওয়া কোরআন একাধিকবার খতম দিতেন। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রমজানের প্রতি রাতে রাসুল (সা.) এর কাছে হজরত জিবরাইল (আ.) আগমন করতেন এবং পরস্পর পরস্পরকে কোরআন পাঠ করে শোনাতেন। সহিহ বুখারি ১৯০২

কোরআন পাঠকারীর জন্য কোরআন কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে নাজাতের সুপারিশ করবে। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘কোরআন আল্লাহর কাছে বলবে, হে প্রভু! আমি তাকে রাতে নিদ্রাযাপন থেকে বিরত রেখেছি। তাই তার ব্যাপারে আপনি আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। অতঃপর সুপারিশ গ্রহণ করা হবে।’ মুসনাদে আহমাদ ৬৬২৬

কোরআন নাজাতের সুপারিশ করবে। সুতরাং কোরআন আমাদের জন্য অনেক বড় নিয়ামত। এমন মানুষও আছে যারা কোরআন পড়তেই পারে না। অথচ নামাজ সহিহ হওয়ার জন্যও কোরআনের নির্দিষ্ট কিছু অংশ বিশুদ্ধভাবে শিক্ষা করা ফরজ। যারা নামাজ সহিহ হওয়া পরিমাণ কোরআন বিশুদ্ধভাবে পাঠ করতে পারে না তাদের উচিৎ রমজানের সময়কে কাজে লাগিয়ে ততটুকু পরিমাণ বিশুদ্ধভাবে শিখে নেয়া।

পবিত্র কোরআনের চর্চা সারা বছরই নিয়মিত করতে হয়। তবুও রমজান মাস উপলক্ষে কোরআনের চর্চাকে ব্যাপকভাবে জোরদার করা উচিৎ। কেননা এই মাসে কোরআন চর্চায় রয়েছে অধিক সওয়াব। আর এই মাসে কোরআন চর্চায় তাগিদ দিলে তা অব্যাহত থাকবে রমজানের পরও।

মোমিন ও পাপীদের কোরআন তেলাওয়াত করা ও না করার বিষয়ে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কোরআন তেলাওয়াতকারী ঈমানদারের দৃষ্টান্ত কমলালেবুর মত। এর স্বাদও উৎকৃষ্ট এবং ঘ্রাণও উৎকৃষ্ট। আর যে মোমিন কোরআন তেলাওয়াত করে না তার দৃষ্টান্ত খেজুরের মত। এটি খেতে সুস্বাদু বটে, তবে তার কোন সুঘ্রাণ নেই। কোরআন তিলাওয়াতকারী পাপী ব্যক্তি সুগন্ধি ফুলের মত। এর সুগন্ধ আছে বটে, তবে স্বাদে তিক্ত। আর যে অতি পাপী হয়ে কুরআনও তিলাওয়াত করে না সে মাকাল ফলের মত। এ ফল স্বাদেও তিক্ত এবং এর কোন সুগন্ধও নেই।’ সহিহ বুখারি ৭৫৬০

কোরআনের শব্দ ও বাক্যগুলো মহান আল্লাহর কথামালায় গাঁথা। কোরআন পাঠ মানে মহান আল্লাহর কথামালার পাঠ, মহান আল্লাহর কথায় কথা বলা, মহান আল্লাহর সঙ্গেই কথা বলা। বিষয়টি অনুধাবন করা মানুষের গভীর অনুভব ও উপলদ্ধির ওপর নির্ভর করে। এছাড়াও কোরআন তেলাওয়াতে মানসিক অস্থিরতা দূর হয় এবং ব্যাপক মানসিক প্রশান্তি মিলে।

লেখক: ধর্মীয় নিবন্ধকার

এমন আরও সংবাদ

Back to top button