প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা পঞ্চাশ বছরের পথ চলায় বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী হয়ে আছে উল্লেখ করে বলেছেন, সংসদীয় গণতন্ত্রের কেন্দ্রবিন্দু জাতীয় সংসদ অনেক চড়াই-উৎরাইয়ের মধ্যদিয়ে গণতন্ত্র অগ্রায়নে ভূমিকা রেখে চলেছে। সরকারের জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় মহান জাতীয় সংসদ অনন্য ভূমিকা পালন করছে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ধারবাহিকভাবে ২০০৮ সালের পরে এই দেশে গণতন্ত্র অব্যাহত আছে। যার ফলে একটা স্থিতিশীলতা আছে। মাঝে মাঝে আমাদের প্রতিবন্ধকতা, অনেক চড়াই-উৎরাই পার হতে হয়। তারপরও বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে, আশা করি ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ এবং জাতির পিতার স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে উঠবে।
স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুক্রবার ( ৭ এপ্রিল) জাতীয় সংসদ সংসদের ৫০ বছর পূর্তি, সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বিশেষ অধিবেশনে ১৪৭ বিধিতে দেওয়া প্রস্তাব সাধারণ উত্থাপনকালে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
সরকার ও বিরোধী দলের উপস্থিতিতে পরিপূর্ণ জাতীয় সংসদের ৫০ বছর পূর্তির এই ঐতিহাসিক দিনে শুক্রবার (৭ এপ্রিল) অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উত্থাপিত প্রস্তাবটি হচ্ছে-‘বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ৫০ বছর পূর্তির এই মাহেন্দ্রক্ষণে সংসদের অভিমত এই যে, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সংসদীয় গণতন্ত্রের কেন্দ্রবিন্দুরূপে জনগণের জীবনমান উন্নয়ন এবং আশা-আকাক্সক্ষার সফল বাস্তবায়নে অব্যাহতভাবে কার্যকর ও সক্রিয় ভূমিকা রাখবে এবং এর মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র হবে সুসংহত, শোষণমুক্ত সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে, সকলের জন্য সাম্য ও ন্যায় বিচার নিশ্চিত হবে, সংবিধানের এ অঙ্গীকারসমূহ পূরণে আমরা সকলে একযোগে কাজ করবো, গড়ে তুলবো আগামীর সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত, ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত স্মার্ট বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা- এই হোক আমাদের প্রত্যয়।
প্রস্তাবটি উত্থাপন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, ৭ এপ্রিল জাতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। ১৯৭৩ সালের ৭ এপ্রিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। আমরা জাতীয় সংসদের ৫০ বছর পূর্তি সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছি। তিনি বলেন, ৫০ বছরের পথ চলায় জাতীয় সংসদ অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার স্বাক্ষী হয়ে আছে।
তিনি বলেন, সংসদীয় গণতন্ত্রের কেন্দ্রবিন্দু জাতীয় সংসদ অনেক চড়াই-উৎরাইয়ের মধ্যদিয়ে গণতন্ত্র অগ্রায়নে ভূমিকা রেখে চলেছে। ৫০ বছরের পথপরিক্রমা অনেক ক্ষেত্রেই মসৃন ছিলো না। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালো রাতে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর বার বার সামরিক ফরমান জারি করে সংবিধানকে ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছে। গণতন্ত্র ও জাতীয় সংসদের ওপর আঘাত হেনেছ।
তিনি বলেন, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল সামরিক ও স্বৈরশাসনের পালাবদলের মধ্য দিয়ে সংবিধানের চার মুলনীতিতে আঘাত করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বন্ধে ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় সংসদে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশকে কালো আইনে পরিণত করা ছিলো সংসদীয় ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। পরবর্তীতে ৭ম সংসদে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিলের মধ্য দিয়ে ইতিহাসের নিকৃষ্টতম ও নির্মম হত্যাকান্ডের বিচারের পথ সুগম করা হয়।
সংসদ নেতা বলেন, সরকারের জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় মহান জাতীয় সংসদ অনন্য ভূমিকা পালন করছে। সংসদের স্থায়ী কমিটিগুলো এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর মন্ত্রণালয়ের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে স্থায়ী কমিটির সভাপতি পদে মন্ত্রীর পরিবর্তে সদস্যদের নির্বাচিত করা হচ্ছে। বিরোধী দলের সদস্যদের থেকে স্থায়ী কমিটির সভাপতি নির্বাচিত করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের সর্বোচ্চ সংসদীয় প্রতিষ্ঠান সিপিএ ও আইপিউতে সভাপতিত্ব ছিলো বাংলাদেশের সংসদের প্রতি আন্তর্জাতিক অঙ্গনের আস্থার প্রতীক। নারীর ক্ষমতায় বাংলাদেশের সংসদ একটি অনন্য দৃষ্টান্ত। বর্তমান সংসদের স্পীকার, সংসদ নেতা, সংসদ উপনেতা, বিরোধী দলের নেতা, একজন হুইপ, চারজন নারী স্থায়ী কমিটির সভাপতির ভূমিকা পালন করছেন। জাতীয় রাজনীতিকে নারীদের উৎসাহিত করতে সংসদে নারী আসন ৫০-এ উর্নীত করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, গত তিন মেয়াদে জাতীয় সংসদের ধারবাহিক অগ্রযাত্রা, সংসদীয় গণতন্ত্রের স্থায়ীত্ব ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বাংলাদেশের ব্যাপক উন্নয়নের ক্ষেত্র রচনা করেছে। জনগনের জীবনমানের উন্নয়নে আজ বাংলাদেশ বিশ্বের বিস্ময়। দারিদ্র বিমোচন, দুর্যোগ মোকাবেলা, নারী ক্ষমতায়ন, শিশু মৃত্যুহার হ্রাস ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিশ্বে বাংলাদেশ আজ রোল মডেল। তিনি বলেন, সংসদীয় গণতন্ত্রের মঞ্চ, মহান জাতীয় সংসদ সরকারের সামগ্রিক উন্নয়নে অংশীদার এবং সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অর্জনসমুহ সংসদে আলোচনার মাধ্যমে জাতির সামনে উপস্থাপিত হয়।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার মাত্র সাড়ে তিন বছরের শাসনকালে দেশের জন্য সবচেয়ে বেশি কার্যকর ভূমিকা পালন করেছিলেন বলে জানান সংসদ নেতা শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, একটি বিরল দৃষ্টান্ত জাতির সামনে রেখে গিয়েছিলেন জাতির পিতা, তা হচ্ছে ইচ্ছা থাকলে কত দ্রুত একটা দেশকে পুর্নগঠন, পুর্নবাসন এবং উন্নয়ন করা যায়। আজকে তিনি বেঁচে থাকলে বাংলাদেশ অনেক আগেই উন্নত দেশ হিসাবে গড়ে উঠতো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা জাতির পিতার আদর্শ নিয়ে পথ চলি। তাই ধারবাহিকভাবে ২০০৮ সালের পরে এই দেশে গণতন্ত্র অব্যাহত আছে। যার ফলে একটা স্থিতিশীলতা আছে। মাঝে মাঝে আমাদের প্রতিবন্ধকতা, অনেক চড়াই-উৎরাই পার হতে হয়। তারপরও বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে, আশাকরি ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ এবং জাতির পিতার স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে উঠবে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে গণপরিষদ এবং প্রথম জাতীয় সংসদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু একটি লক্ষ্য নিয়েই রাজনীতি করেছিলেন। দেশের স্বাধীনতা এবং মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা আছেন। বঙ্গবন্ধু কন্যার হাতে আওয়ামী লীগের পতাকা তুলে দেওয়া হয়। সে পতাকা হাতে নিয়ে তিনি যতœ সহকারে রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন। দেশকে সবদিক থেকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
প্র্রথম জাতীয় সংসদের আরেক সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, ষড়যন্ত্র নানা দিকে বিস্তৃত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র দেশের উন্নয়ন ও স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। ’৭১, ’৭৫ ও ২১ আগস্টের খুনীদের ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। তারা দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির চাকাকে স্তব্ধ করে দিয়ে দেশকে আবারও পেছনের দিকে অর্থাৎ ব্যর্থ রাষ্ট্র পরিণত করতে চায়। তিনি সব ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল প্রগতিশীল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, তারা একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে এগিয়ে যেতে চান। কিন্তু সেখানেও বাঁধা আছে। যারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিদেশে চাকরি দিয়েছিল তারাই বাঁধা।
শেখ ফজলুর রহমান সেলিম বলেন, আর যাতে কোন সামরিক জান্তারা ক্ষমতায় আসতে না পারে সেইদিকে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির সকল ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে হবে।