ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে কক্সবাজারের উপকুলীয় এলাকায় সকাল থেকে থেমে থেমে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। উপকূলে স্বাভাবিকের থেকে জোয়ারের পানি বেড়েছে দুই থেকে তিন ফুট। সাগর একটু একটু করে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে।
আজ বেলা ১২টার দিকে কক্সবাজার শহরের লাবণি ও সুগন্ধা পয়েন্টে বেশকিছু পর্যটককে ঘুরতে দেখা গেছে। তবে উপকুলে বিচকর্মীরা পর্যটকদের সাগরে নামতে বাধা দিচ্ছে।
এ নিয়ে জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, ‘আজ সকাল থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত উপকূলের বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে ৩২ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য সমুদ্র সৈকতে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশ ও বিচকর্মীরা কাজ করছে। জেলার সব নৌপথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সকাল থেকে কক্সবাজার বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।’
এ দিকে বেলা ১২টা পর্যন্ত কুতুবদিয়ায় কোনো আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষ যায়নি। দুপুরের পর থেকে লোকজন আশ্রয়কেন্দ্রে যাবেন বলে উপজেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে কক্সবাজারের মহেশখালীর দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থেকে গতকাল শুক্রবার রাত ১১টা থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার রাত থেকে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন ঝুঁকিতে থাকা লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে আসার জন্য মাইকিং করছে। এ ছাড়া বেড়াতে আসা পর্যটকদেরও কক্সবাজার ছাড়তে দেখা গেছে।
অন্যদিকে গতকাল রাতে জেলা দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় সেন্ট মার্টিন নিয়ে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে। সেখানে হোটেল, রিসোর্ট ও দুতলা ভবনগুলোতে যেন দ্বীপের বাসিন্দারা আশ্রয় নিতে পারে সেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া জেলার উপকূলীয় এলাকার ৫৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্রের পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও উঁচু ভবনে আশ্রয়কেন্দ্র খোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৫ লাখ মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে। এ জন্য প্রায় ১০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছে। ইতিমধ্যে সেন্টমার্টিন থেকে কয়েক হাজার মানুষ ট্রলারে করে টেকনাফে চলে এসেছেন। যারা আসতে পারেননি তাদের স্থানীয় হোটেল রিসোর্ট এবং নৌবাহিনীর কোস্ট গার্ডের স্থাপনায় আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে।
অপরদিকে সবচেয়ে বেশ ঝুঁকিতে রয়েছে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের পাহাড়ে অবস্থিত ৩৩টি রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির। এসব শিবিরে বসবাস করছেন ১২ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা।
অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. সামছু দ্দৌজা নয়ন বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
রোহিঙ্গা শিবিরে কর্মরত জাতিসংঘের শরনার্থী বিষয়কসংস্থা ইউএনএইচসিআর, আন্তর্জাতিক অভিবাসন আইওএম ও বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচিসহ বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে। ঘুর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির স্বেচ্ছাসেবক ও রেডক্রিসেন্টসহ অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবকদেরও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।