আফ্রিকায় কয়েক মিলিয়ন মানুষ কভিড-১৯ ভাইরাসে সংক্রামিত হতে পারে
জিয়াউর রহমান নিপু, আফ্রিকা থেকে: পৃথিবীর অনগ্রসর দেশ গুলোর বেশির ভাগ ই আফ্রিকা মহাদেশে অবস্থিত। অন্যান্য মহাদেশের দেশগুলো থেকে অর্থিনৈতিক এবং সামাজিক অবকাঠামোর দিক দিয়ে আফ্রিকার দেশগুলো অনেকখানি পিছিয়ে রয়েছে। গণতন্ত্রের সীমাবদ্ধতা, জাতীয় এবং গুষ্ঠীভিত্তিক দলাদলির জন্য আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায়ই দাঙ্গা ফাসাদ লেগেই থাকে।
এরই মধ্যে বৈশ্বিক মহামারী হিসাবে কভিড-১৯ এর প্রভাব বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় আফ্রিকার অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে। এই দেশগুলো করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে।
কভিড-১৯ মৃত্যুর সংখ্যা এখনও উন্নত দেশ গুলোতে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তবে আফ্রিকার উপর মহামারীটির প্রভাব আরও খারাপ হতে পারে। আফ্রিকান মহাদেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা গুলোকে অবশ্যই বিপর্যয় রোধ করতে সাহসের সাথে সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ করতে হবে। কারণ এই মহামারী, আফ্রিকার কোনো দেশই একক ভাবে মোকাবেলা করতে সক্ষম হবে না।
২০১৪ সালে ছড়িয়ে পড়া ইবোলা মহামারী মোকাবেলায় অনেক আফ্রিকান দেশ অপ্রস্তুত ছিল যার কারণে তাদের কে অনেক মূল্য দিতে হয়েছিল। কভিড-১৯ অনেকটা ইবোলা চেয়েও মারাত্মক ও বিপদজনক কারণ এটি দ্রুত ছড়িয়ে পরে, অন্যদিকে আফ্রিকান দেশগুলোর দুর্বল স্বাস্থ্য-ব্যবস্থা, চিকিৎসা সরঞ্জামের সীমাবদ্ধতা, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতা তো রয়েছেই।
আফ্রিকার দেশ মিশরে প্রথম কভিড-১৯-এর পজিটিভ কেস ধরা পরে ফেব্রুয়ারী ১৪ তারিখে এবং ক্রমান্বয়ে আলজেরিয়া, মিশর, মরক্কো এবং দক্ষিণ আফ্রিকা দেশ গুলোতে ও করোনা রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকে। ইতিমধ্যে মহাদেশটির মৃত্যুর সংখ্যা ১৫০০ ছাড়িয়ে গেছে এবং করোনা পজিটিভ কেস ৩০২৫০ নিশ্চিত করা হয়েছে।
যদিও আন্তর্জাতিক সংস্তাগুলো এই গণনা কে সঠিক মানতে রাজি নয় কারণ করোনা টেস্টিং কিট এর স্বল্পতার জন্য অনেক দেশই প্রয়োজন অনুযায়ী করোনা টেস্ট করতে সক্ষম হচ্ছে না।
স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার দিক দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা ভালো অবস্থানে থাকলেও আফ্রিকা অন্যান্য দেশ গুলো অনেক পিছিয়ে। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন তথ্যানুসারে, এই মহাদেশটিতে প্রতি এক হাজার বাসিন্দার জন্য মাত্র ১:০৬ ডাক্তার এবং নার্স রয়েছে।
লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের এক গবেষনাই উঠে আসে যে, আগামী কয়েক সপ্তাহ বা মাসের মধ্যে কয়েক মিলিয়ন আফ্রিকান মানুষ কভিড-১৯ এ সংক্রামিত হতে পারে। ভাইরাসটি কেবল আফ্রিকার সাব-সাহারান এরিয়াতে ৩০০০০০ লোককে হত্যা করতে পারে।
এর ফলে এই দেশগুলোর সামাজিক অবকাঠামো ভেঙে পরবে, আমদানি – রফতানি আয় হ্রাস পাবে, খাদ্যপণ্যের সরবরাহের চেইন বিচ্ছিন্ন হবে এবং কিছু কিছু অঞ্চলে খাদ্যের অভাবে মহামারী দেখা দিবে, ফলে লক্ষ লক্ষ লোক মারা যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিবে।
শুরুতে আফ্রিকার নেতাদের অবশ্যই ডাব্লুএইচএও এবং সেই সব দেশগুলোর কাছ থেকে শিখতে হবে যারা ইতিমধ্যে মহামারীটি ভয়াবহতা অনুভব করেছে এবং তা নিয়ন্ত্রণের দিকে যাচ্ছে, যেভাবে দক্ষিণ আফ্রিকাকে দক্ষিণ কোরিয়া অনুসরণ করছে।
তাই বর্তমানে আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ ই একমাত্র আফ্রিকাকে আসন্ন মহামারী থেকে রক্ষা করতে পারে। আন্তর্জাতিক দাতা সংস্তাগুলো এবং আফ্রিকার পূর্বেকার শাসক দেশগুলোর সার্বিক সহযোগিতা ই পারবে আফ্রিকার অনুমেয় মহামারী থেকে রক্ষা করতে।