দেশজুড়ে

লাভ নয়, আসল পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় খামারিরা

এক্সক্লুসিভ নিউজ ২৪.কম:  কোরবানির পশুর চাহিদা মেটাতে দেশে বড় ভূমিকা রেখে আসছেন কুষ্টিয়া অঞ্চলের খামারি ও কৃষকরা। গরুর পাশাপাশি বিশেষ করে বৃহত্তর কুষ্টিয়া অঞ্চলের বিখ্যাত ব্লাক বেঙ্গল ছাগলের কদর অনেক বেশি। এবার কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে জেলার ১৮ হাজার খামারি উৎপাদন করেছেন এক লাখেরও বেশি গরু। এছাড়া তারা প্রায় ৬০ হাজার ছাগল পালন করেছেন। কিন্তু করোনার কারণে এবার প্রায় ৫০ ভাগ পশু অবিক্রিত থাকতে পারে বলে খামারি ও কৃষকরা আশঙ্কা করছেন।

কুমারখালী উপজেলার যদুবয়বা ইউনিয়নের জোতমোড়া গ্রামের খামারি আবদুল মালেক সারা বছর বাড়িতে কমবেশি গরু পালন করেন। তবে কোরবানির ঈদ সামনে আসলে লাভের আশায় গরুর সংখ্যা বাড়ান। এবারও তার খামারে ছোট-বড় মিলিয়ে ১২টি গরু রয়েছে। দিন-রাত গরু পরিচর্যায় সময় পার করছেন। তবে ঈদের দিন যত ঘনিয়ে আসছে তার দুশ্চিন্তাও ততই বাড়ছে।

তিনি বলেন, গত বছর গরু বিক্রি করে মোটামুটি লাভ হয়েছিল। তাই এবারও গরু পালন করেছি। কিন্তু করোনার কারণে এবার লাভ তো দূরে থাক, আসল দাম তুলতে পারলেই আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। গো-খাদ্যের যে দাম বেড়েছে তাতে লোকসান হবে বলে মনে হচ্ছে। অন্য বছর আগেই ব্যাপারিরা বাড়ি আসত। এবার কেউ আসছেন না। দু-একজন আসলেও দাম বলছেন অনেক কম।

আবদুল মালেকের মতো জেলার বেশির ভাগ খামারিকে গরু বিক্রি করা নিয়ে এখন দুশ্চিন্তা করতে হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে লাভ কম হলেও অনেক খামারি স্থানীয় বাজারে আগেই গরু বিক্রি করে দিচ্ছেন। আর যারা ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের অন্যান্য জেলায় বিক্রি করেন তারা অপেক্ষা করছেন পরিস্থিতি বোঝার জন্য।

এবার করোনার কারণে গরু বাজারে নিয়ে বিক্রি করা কঠিন হবে বলে মনে করছেন তিনি। তাই বাড়ি থেকে বা স্থানীয়ভাবে কম লাভ হলেও গরু ছেড়ে দেবেন বলে জানান। তার খামারে পাঁচটির মতো বড় গরু রয়েছে।

সদরের বড় খামারি উজানগ্রাম ইউনিয়নের সোনাইডাঙ্গা গ্রামের শরিফ হোসেন। তার খামারে ছোট-বড় মিলিয়ে ৬০টি গরু রয়েছে। এ গরুর অর্ধেক বিক্রি করা নিয়েই তার চিন্তা। লাভ নিয়ে ভাবছেন না। গরু বিক্রি করতে পারলেই তিন খুশি। কারণ খামারে গরু থেকে গেলে প্রতিদিন তার পেছনে ব্যয় আছে। তাতে লোকসান আরও বাড়বে। খামার খালি করা নিয়েই ভাবছেন তিনি।

খামারিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিবার ঈদের দু-এক মাস আগে থেকেই জেলার হাটে হাটে ঘুরে ব্যাপারিরা গরু কিনে ঢাকা, চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন হাটে তুলতেন। এবার সেই সংখ্যা অনেক কম। জেলায় পশুর বড় হাট রয়েছে ১২টি। এসব হাট ছাড়াও প্রত্যন্ত অঞ্চলে আরও ছোট ছোট হাট-বাজারে বিক্রির জন্য প্রতিদিন হাজার হাজার গরু-ছাগল নিয়ে আসছেন খামারিরা। কিন্ত কেনা-বেচা একদম কম। ঈদুল আজহার আর মাত্র ২০-২২ দিন বাকি থাকলেও বাইরের ব্যাপারিদের তেমন একটা দেখা মিলছে না।

 

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সিদ্দীকুর রহমান বলেন, জেলায় এবার প্রচুর গরু পালন করেছেন খামারিরা। তবে ঈদ এগিয়ে আসায় তাদের দুশ্চিন্তা বেড়েছে। করোনা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় জেলার যেসব খামার মালিক ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাজারে গরু নিয়ে লাভ করতেন তারা এবার ক্ষতির মুখে পড়ে যেতে পারেন। দেশের সার্বিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে গরুর বাজার। স্থানীয় বাজারে কেনাবেচা হলেও বাইরে থেকে ব্যাপারিরা এবার আসছেন না দেখে চিন্তা বেড়েছে খামারিদের।

তিনি বলেন, আমরা খামারিদের মনোবল বাড়াতে কাজ করছি। তাদের নানা ধরনের প্রণোদনা দিয়ে আসছি।

এমন আরও সংবাদ

Back to top button