চারশ বছরেও রাজা ‘কাচ্চি’
বিরিয়ানির নাম ‘কাচ্চি’। শুনেই জিহ্বায় জল এসে যায়। আর সেই কাচ্চি যদি হয় পুরান ঢাকার, তাহলে তো কথাই নেই। সকাল থেকে রাত, ভোর থেকে ফের রাত- কাচ্চির চাহিদা সব সময়ের। শুধু দোকান খুলে রাখা দরকার। প্রায় চারশ’ বছর থেকে বাংলায় রাজত্ব চলছে মুঘল খাদ্যভাণ্ডারের সুস্বাদু এই খাবারটি। ৪০০ বছরেও কমেনি কদর। তবে আগে যা ছিল ঘরোয়া, তা এখন ব্যবসায়িক বিশাল বাজার ধরে রেখেছে পুরান ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। তবে শ্রেষ্ঠত্বের দাবি রাখে পুরান ঢাকার কাচ্চি বিরিয়ানি। শুধু বাংলাদেশ নয় গোটা ভারতবর্ষ তথা ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, বাহরাইন, ব্রুনেই, মিয়ানমার, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, ইরাক, কুর্দিস্তান, কুয়েত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও শ্রীলংকাসহ অনেক দেশেই এই কাচ্চি পাওয়া যায়।
ইতিহাস ঘেঁটে এবং লোকমুখে জানা যায়, বিরিয়ানি শব্দের উৎপত্তি ফারসি ‘বিরিয়ান’ থেকে। ফারসিতে বিরিয়ান শব্দের অর্থ রান্নার আগে ভেজে নেওয়া। বিরিয়ানি রান্নার আগে সুগন্ধি চাল ঘি দিয়ে ভেজে নেওয়া থেকেই এই নামকরণ হয়েছে।
জনশ্রুতি আছে, একদা রানী মমতাজ মোঘল সৈন্যদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে সৈন্যদের ব্যারাকে গেলেন। সেখানে রানী দেখতে পেলেন সৈনিকদের স্বাস্থ্যের অবস্থা ভালো না। তাই মিলেটারি মেসের বাবুর্চিকে নির্দেশ দিলেন চাল ও গোশত সমৃদ্ধ এমন একটা পুষ্টিকর খাবার তৈরি করতে, যেটা সৈনিকদের খারাপ স্বাস্থ্যের উন্নতি করে দিতে পারে। রানী মমতাজ মহলের আদেশে বাবুর্চি যে খাবারটি তৈরি করলেন সেটাই আজকের দিনের বিরিয়ানি নামে পরিচিত। যা পুরান ঢাকায় রন্ধনশিল্পে বিশাল অবস্থান দিব্যি দখল করে আছে। তবে আগে যা ছিল ঘরোয়া, এখন তা হয়ে উঠেছে ব্যবসায়িক পরিসরে।
পুরান ঢাকার নাজিরাবাজারের হাজী বিরিয়ানি বিশেষভাবে নামকরা। হাজীর বিরিয়ানি ১৯৩৯ সালে হাজী গোলাম হোসেন সাহেবের হাত ধরে যাত্রা শুরু করে। এটি এখনো সবার প্রথম পছন্দ। এছাড়াও নাজিরাবাজারের নবাব বিরিয়ানি, হানিফ বিরিয়ানি, চানখাঁর পুলের হাজী নান্নার বিরিয়ানি, ফখরুদ্দিনের বিরিয়ানি, নারিন্দার ঝুনুর বিরিয়ানিসহ আরও অসংখ্য বিরিয়ানি ঘর গড়ে উঠেছে নতুন ও পুরান ঢাকার অলিতে-গলিতে। এসব দোকানে এদের মধ্যে ঢাকাই বিরিয়ানি, সিন্ধি, হায়দারাবাদী, বোম্বাই ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
পুরান ঢাকায় সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হলো কাচ্চি বিরিয়ানি। কাচ্চি শব্দটা এসেছে উর্দু কাচ্চা শব্দটি থেকে যার বাংলা প্রতিশব্দ কাঁচা। কাচ্চি বিরিয়ানিতে সুগন্ধি চালের সঙ্গে গোশত সরাসরি রান্না করা হয় সে কারণেই এর নাম কাচ্চি বিরিয়ানি। এটি হিন্দি এবং উর্দুতেও একই নামে পরিচিত। সেদ্ধ ছাড়া খাসির গোশত টক দই দিয়ে মাখিয়ে তার ওপর আলু আর চাল মিক্সড করে রান্না করা হয় কাচ্চি বিরিয়ানি। এসব দোকানে কাচ্চির দাম ১০০-৩০০ পর্যন্ত হয়ে থাকে।
কুমিল্লা থেকে কাচ্চি খেতে আসা রুমান বলেন, ‘পুরান ঢাকার এসব কাচ্চির স্বাদ নিতে গতকাল হাজীর বিরিয়ানি খেয়েছিলাম। আজ এসেছি নবাব বিরিয়ানি খেতে। এর স্বাদের কোনো তুলনা হয় না।’
ফাহিম নামের এক কাচ্চি বিক্রেতা বলেন, ‘প্রতিদিন অনেক কাস্টমার আসেন। বিশেষ দিনগুলোতে মানুষের চাপ খুব বেশি থাকে। রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়। বাংলাদেশ এবং কলকাতাসহ বিভিন্ন জায়গার মানুষ এখানে খেতে আসেন।’