১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার না হলে আর পাঁচ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ উঠে দাঁড়াতো বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, আজকে যে সম্মানজনক অবস্থানে আমরা আসতে পেরেছি, জাতির পিতা বেঁচে থাকলে সেই জায়গায় আমরা স্বাধীনতার ১০ বছরে পৌঁছে যেতো। বঙ্গবন্ধু যদি আর পাঁচটি বছর সময় পেতেন, বাংলাদেশ উঠে দাঁড়াতো।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ৫০ বছরপূর্তি উপলক্ষে বুধবার বিকালে জাতীয় সংসদের বিশেষ আলোচনায় ১৪৭ বিধিতে প্রস্তাব তোলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে উত্থাপিত প্রস্তাবের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন সংসদ নেতা।
এদিন বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, মুক্তির মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ৩০ লাখ মহান শহীদ, আত্মত্যাগী ২ লাখ মা-বোন, সকল বীর মুক্তিযোদ্ধা, জাতীয় চার নেতা-সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, এ.এইচ.এম কামারুজ্জামানসহ সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের শহীদদের প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী।
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার বঙ্গবন্ধুর কর্মকাণ্ডের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘পাকিস্তানি বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি লণ্ডনে চলে যান। সেখান থেকে ভারত হয়ে, ভারতবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বাংলার মাটিতে ফিরে আসেন।’
‘১০ জানুয়ারি তিনি আগে বাংলাদেশের জনগণের কাছেই যান। আমরা তখন প্রতীক্ষায় ছিলাম, কখন আমার বাবা ঘরে আসবে। আমরা তখন যে বাড়িতে বন্দী (মুক্তিযুদ্ধচলাকালীন) ছিলাম। আমরা বাবাকে দেখতে পাই পরে, তাকে জনগণ পায় আগে। এটা হচ্ছে বাস্তবতা। তার কাছে জনগণই ছিলো সবথেকে বড়।’
স্বাধীনতা পরবর্তী দেশের উন্নয়নে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিভিন্ন কার্যক্রমের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশকে একটি প্রদেশ থেকে রাষ্ট্রে উন্নীত করবার যত আইন, নিয়ম-নীতিমালা সবই তিনি করে দিয়ে যান। আমি দীর্ঘদিন রাষ্ট্র চালাচ্ছি। প্রতিদিন যত কাজ করতে যাই, তখনই আমি এটা লক্ষ্য করি। এটা আমার কাছে বিস্ময় মনে হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, যখনেই বঙ্গবন্ধু যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়তে চেয়েছিলেন। তখন দেশের কিছু মানুষের মাঝে অস্থিরতা শুরু হয়েছিলো মনেহয়। তারা নানা ধরনের কথা, সমালোচনা, আলোচনা এবং অনেক নির্বাচিত সংসদ সদস্যকে হত্যা করা। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আত্মসমপর্ণ করেছিলো সত্যি। কিন্তু তারা তাদের কিছু দালাল, যুদ্ধাপরাধী এদেরকে রেখে যায়। যারা তখন, আমাদের কিছু মুক্তিযোদ্ধাকে হাতে নিয়ে দেশের ভিতরে একটা অরাজকতার চেষ্টা চালায়। দেশের অগ্রযাত্রাটা সহ্য হয় না।
সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াবে। এটা স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী ও তাদের দোসররা মানতে পারে না। যার জন্য একদিকে চক্রান্ত চলছে। ওই অবস্থা মোকাবেলা করে জাতির পিতা মানুষের উন্নয়েনের জন্য দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক দেন। মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে এমন একটি পদ্ধতি নিয়েছিলেন, যেখানে একজন সাধারণ মানুষ নির্বাচনে জয়ী হতে পারে। বৈষম্য দূর করার জন্য ক্ষমতাকে বিকেন্দ্রীকরণ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু।
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবের বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন জাতীয় সংসদে। তিনি বলেন, সেই সময় বাংলাদেশ একটা মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে যাক তারা চায়নি। তারা এটা সহ্য করতে পারেনি। এটা নিয়ে নানা ধরনের অপপ্রচার চালিয়েছে। অপপ্রচার করেও যখন দেখে জনগণের কাছ থেকে জাতির পিতাকে সরাতে পারতেছে না। তখন পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের ঘটনা ঘটানো হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্থানীয় সরকারবে শক্তিশালী করেন। বঙ্গবন্ধুর সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে- বঙ্গবন্ধু যে কাজগুলি করতে চেয়েছিলেন-এজন্য আর ৫টি বছর তিনি হাতে সময় পেতেন বাংলাদেশ উঠে দাঁড়াতো। আজকে যে সম্মানজনক অবস্থানে আমরা আসতে পেরেছি, জাতির পিতা বেঁচে থাকলে সেই জায়গায় আমরা স্বাধীনতার ১০ বছরে পৌঁছে যেতে পারতাম।