এক্সক্লুসিভ নিউজদেশজুড়ে

কক্সবাজারে পর্যটক ধর্ষণ: চাঞ্চল্যকর তথ্য দিলো পুলিশ

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় এখনো কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। তবে পুলিশের হাতে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। ধর্ষকের সঙ্গে বহুদিন ধরেই পরিচয় আছে ধর্ষণের শিকার ঐ নারী পর্যটকের। এছাড়া তিনি গত তিনমাসে দুইবার কক্সবাজার এসেছেন বলেও জানা গেছে।

ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর পর্যটক ও স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সমুদ্র সৈকতের নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কিত সবাই। এদিকে ঘটনায় জড়িতদের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তা ঘুরে বেড়াচ্ছে সবার হাতে।

এ বিষয়ে পুলিশ বলছে, তারা দুইজনকে শনাক্ত করেছে। একজন শহরের বাহারছড়া এলাকার আব্দুল করিমের ছেলে আরিফুল ইসলাম আশিক, অপরজন তার সহযোগী ইস্রাফিল হুদা ওরফে জয়।

বৃহস্পতিবার রাতে আরিফুল ইসলাম আশিকসহ চারজনের নাম উল্লেখ ও তিনজনকে অজ্ঞাত আসামি করে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় মামলা করেন ধর্ষণের শিকার নারীর স্বামী। এজাহারভুক্ত বাকিরা হলেন- আশিকের দুই সহযোগী ইস্রাফিল হুদা ওরফে জয় ও মেহেদী হাসান ওরফে বাবু এবং জিয়া গেস্ট ইন হোটেলের ব্যবস্থাপক রিয়াজ উদ্দিন। এর মধ্যে রিয়াজ উদ্দিনকে বুধবার রাতে আটক করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে বাকি আসামিরা পলাতক। আশিকের সঙ্গে রিয়াজের চেনাজানা রয়েছে।

শুক্রবার শহরের বাহারছড়ার বাড়িতে গিয়ে আশিককে পাওয়া যায়নি। আশিকের মা ও ছোট ভাই বাবুল বলেন, বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে আশিক বাসায় এসেছিলেন। কিছুক্ষণ পর ফোন পেয়ে আবার বেরিয়ে যান। এরপর থেকে তিনি আর বাড়ি ফেরেননি।

বাহারছড়া এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, কক্সবাজারে সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্রের মূল হোতা আশিক। তার নেতৃত্বে রয়েছে ৩২ জনের একটি চক্র। তারা প্রত্যেকে বিভক্ত হয়ে আবার কখনো ২-৩ জন দলভুক্ত হয়ে শহরের অলিগলিতে চুরি, ছিনতাই, খুনসহ নানা অপরাধ করে বেড়ায়। পর্যটকরাও তাদের হাত থেকে রেহাই পায় না।

পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, আরিফুল ইসলাম আশিক ও তার সহযোগী ইস্রাফিল হুদা ওরফে জয় ছিনতাইকারী। আশিকের বিরুদ্ধে ১৬টি ও জয়ের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা আছে। একাধিকবার গ্রেফতার হয়েছে দুজন।

ট্যুরিস্ট পুলিশ জানিয়েছে, ধর্ষণের ঘটনা ও মামলার তদন্তে মাঠে নেমেছে একাধিক টিম। ধর্ষণের শিকার নারী ও তার স্বামী বর্তমানে হেফাজতে আছেন। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারের এসপি মো. জিল্লুর রহমান বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে ঐ নারী গত তিন মাসে দুইবার কক্সবাজারে আসার পাশাপাশি আরিফুল ইসলাম আশিকের সঙ্গে পূর্বপরিচয় থাকার কথা স্বীকার করেছেন। আশিক তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ও ১৬টি মামলার আসামি। সে একই সঙ্গে মাদকসেবন ও মাদক ব্যবসায়ে জড়িত। তার সঙ্গে বাইরের একজন নারীর পরিচয় থাকা সন্দেহজনক।

তিনি আরো বলেন, এসব তথ্য উঠে আসার পর ধর্ষণের ঘটনাটি সাজানো বলে ধারণা করা হচ্ছে। আমরা ঘটনার গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করছি। আসল রহস্য উদঘাটন করে শিগগিরই জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।

ধর্ষণের শিকার নারী ও তার স্বামীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন ট্যুরিস্ট পুলিশের এডিশনাল এসপি মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, তিন মাসে ঐ নারী বেশ কয়েকবার কক্সবাজারে এসেছেন। এর মধ্যে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় তিনি অভিযোগ করেছিলেন- তার স্বামীর টাকাপয়সা, মোবাইল চুরি হয়ে গেছে। দেড় থেকে দুই মাস আগে ঐ নারী ৯৯৯-এ কল দিয়ে বলেছিলেন- তিনি নারী বিপদে পড়েছেন, আক্রমণের শিকার হতে পারেন। কিন্তু পরে তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি। তখন তাদের চলে যেতে বলা হয়েছিল, কিন্তু তারা এখানেই অবস্থান করেছেন। এসব খুঁটিনাটি বিষয় পর্যালোচনা করা হচ্ছে। শিগগিরই রহস্যের কূল-কিনারা হবে।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার সকালে ঢাকা থেকে স্বামী ও আট মাসের সন্তানকে নিয়ে ঐ নারী কক্সবাজারে বেড়াতে যান। বিকেলে তিনি সমুদ্র সৈকতের লাবণী পয়েন্টে ঘুরতে যান। বালুচর দিয়ে হেঁটে পানির দিকে নামার সময় এক যুবকের সঙ্গে তার স্বামীর ধাক্কা লাগে। এ নিয়ে কথা-কাটাকাটির জেরে সন্ধ্যায় ঐ নারীকে সিএনজিতে করে তুলে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এরপর একটি ঝুপড়ি চায়ের দোকানে নিয়ে তিনজন মিলে ধর্ষণ করে। পরে একটি রিসোর্টে নিয়ে তাকে আটকে রাখা হয়।

আরো জানা গেছে, হোটেলের ভেতরেই মাদক সেবনের পর ধর্ষকরা তাকে আবারো ধর্ষণ করে। পরে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে চলে যায়। এসব ঘটনা কাউকে জানালে তার স্বামী-সন্তানকে হত্যা করা হবে বলেও ভয়ভীতিও দেখায় তারা। পরে ওই নারী এক ব্যক্তির সহায়তায় দরজা খুলে বের হন এবং ৯৯৯-এ কল দেন। সেখান থেকে বলা হয় থানায় গিয়ে জিডি করার জন্য। এরপর হোটেল রুমের বাইরে একটি সাইনবোর্ড থেকে নম্বর নিয়ে কল দেন র‍্যাব-১৫-তে। পরে র‍্যাব ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাকে উদ্ধার করে।

এমন আরও সংবাদ

Back to top button