জাতীয়

ডিএমপিতে প্রণীত হল ‘কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি ও যৌন নির্যাতন বন্ধে নীতিমালা ও কর্মপন্থা’

ডিএমপিতে নারী সদস্যদের নিরাপদ কর্মপরিবেশ বজায় রাখার লক্ষ্য প্রণীত হল ‘কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি ও যৌন নির্যাতন বন্ধে নীতিমালা ও কর্মপন্থা ২০২১’।

মহামান্য সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে দায়েরকৃত রিট পিটিশন ৫৯১৬/২০০৮ এর প্রেক্ষিতে মহামান্য হাইকোর্টের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনার আলোকে পুলিশ সদর দপ্তরের গাইডলাইনস্ অনুসরণ করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সকল বিভাগে নারীদের নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে এই নীতিমালা ও কর্মপন্থা প্রণীত হয়। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোহাঃ শফিকুল ইসলাম, বিপিএম (বার) এর নির্দেশনায়, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (এ্যাডমিন) মীর রেজাউল আলম, বিপিএম (বার) এর সার্বিক তত্ত্বাবধান ও উইমেন সাপোর্ট এন্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার হামিদা পারভীন, পিপিএম এর পরিকল্পনায় ‘কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি ও যৌন নির্যাতন বন্ধে নীতিমালা ও কর্মপন্থা ২০২১’ প্রণয়ন করা হয়েছে।

‘যৌন হয়রানি ও যৌন নির্যাতন বন্ধে নীতিমালা ও কর্মপন্থা ২০২১’ এর প্রকাশনায় ছিল ডিএমপি’র উইমেন সাপোর্ট এন্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগ।

এর মুখবন্ধে ডিএমপি কমিশনার মোহাঃ শফিকুল ইসলাম, বিপিএম (বার) বলেন, ‘‘ঢাকা মহানগর এলাকার সহিংসতার শিকার নারী ও শিশুদের প্রতি সংবেদনশীলতা ও তাদের অধিকারকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে নারী ও শিশুর প্রতি সকল প্রকার সহিংসতা প্রতিরোধে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। বাংলাদেশ পুলিশের সর্ববৃহৎ এই ইউনিটে বর্তমানে দুই হাজারের অধিক নারী সদস্য কর্মরত। জেন্ডার সংবেদনশীলতাকে গুরুত্ব দিয়ে তাদের জন্য নিরাপদ ও অধিকতর সহনশীল কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ বদ্ধপরিকর। মহামান্য সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে দায়েরকৃত রিট পিটিশন ৫৯১৬/২০০৮-এর প্রেক্ষিতে মহামান্য হাইকোর্টের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনার আলোকে পুলিশ সদর দপ্তর কর্তৃক প্রদত্ত গাইডলাইনস অনুসরণ করে ‘কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি ও যৌন নির্যাতন বন্ধে নীতিমালা ও কর্মপন্থা ২০২১’ প্রণয়ন করা হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সকল বিভাগে নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি ও যৌন নির্যাতন সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি ও তা প্রতিরোধকল্পে এই নীতিমালা ও কর্মপন্থা প্রকাশনাকে আমি স্বাগত জানাই। কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি ও যৌন নির্যাতন বন্ধে নীতিমালা ও কর্মপন্থা ২০২১’ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে কর্মরত সকল নারী সদস্যের হয়রানিমুক্ত নিরাপদ কর্মপরিবেশে তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে আমার বিশ্বাস‘’।

এই নীতিমালা ও কর্মপন্থা প্রণয়নের পটভূমি: কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট কোনো আইন নেই যা রক্ষাকবচ হিসেবে আমাদের সংবিধানে উল্লিখিত জেন্ডার সমতাকে নিশ্চিত করতে পারে। ফলে প্রতিনিয়ত ঘটছে নারীর প্রতি যৌন হয়রানিমূলক ঘটনা। এ প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ন্যাশনাল উইমেন ল’ইয়ারস অ্যাসোসিয়েশন (BNWLA) ৭ আগস্ট ২০০৮ তারিখ মহামান্য সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে জনস্বার্থমূলক রিট পিটিশন নং-৫৯১৬/২০০৮ দায়ের করে। দায়েরকৃত রিট পিটিশনের রায়ে ১৪ মে ২০০৯ তারিখ মহামান্য হাইকোর্ট কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ১১টি সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা প্রদান করেন। উল্লিখিত নির্দেশনার আলোকে বর্ণিত “Directives in the form of guidelines”-এর প্রেক্ষিতে সংবিধানের ১১১ নং অনুচ্ছেদের মর্মার্থ অনুযায়ী যতদিন পর্যন্ত এ বিষয়ে উপর্যুক্ত আইন প্রণয়ন না হবে ততদিন পর্যন্ত সকল সরকারি-বেসরকারি কর্মক্ষেত্রে এ গাইডলাইনস অনুসরণ ও পালন বাধ্যতামূলক। উক্তরূপ নির্দেশনার আলোকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ-এর নিয়ন্ত্রণাধীন সকল কর্মক্ষেত্রে যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ ও যৌন নির্যাতন বন্ধে একটি কার্যকর নীতিমালা প্রণয়নের আবশ্যিকতা অনুভূত হয়।

বর্তমানে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের বিভিন্ন পদে দুই হাজারের অধিক নারী সদস্য রয়েছেন এবং কর্মরত নারী ও পুরুষের অনুপাত প্রায় ১:১০। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কর্মক্ষেত্রে নারী পুরুষের সমতায় এবং নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বাসী এবং কর্মক্ষেত্রে নারী সদস্যদের সকল প্রকার অধিকার বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে কর্মরত সকল নারী সদস্য যাতে হয়রানিমুক্ত কর্ম-পরিবেশে কাজ করতে পারেন সেজন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে মহামান্য হাইকোর্ট কর্তৃক প্রদত্ত যৌন হয়রানিমুক্ত কর্ম-পরিবেশ তৈরিতে অনুসরণীয় নীতিমালার ৯নং ধারা মোতাবেক পুলিশ সদর দপ্তর কর্তৃক প্রদত্ত গাইডলাইনস-এর আলোকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অধিক্ষেত্রে সকল বিভাগে কর্মরত পুলিশ সদস্য/নন পুলিশ/সিভিল স্টাফ/ অথবা প্রেষণে কিংবা চুক্তিভিত্তিক বা অন্য কোনোভাবে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি ও যৌন নির্যাতন বন্ধের লক্ষ্যে এতদবিষয়ে অভিযোগ গ্রহণ, অনুসন্ধান সম্পাদন ও সুপারিশ প্রদানসহ যৌন হয়রানি ও যৌন নির্যাতন সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি ও প্রতিরোধকল্প এই নীতিমালায় প্রণীত হয়েছে।

নীতিমালার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য: এই নীতিমালা ও কর্মপন্থা প্রণয়নের উদ্দেশ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের আওতাভুক্ত বিভাগসমূহের সকল পর্যায় কর্মরত নারী সদস্যদের কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি হতে সুরক্ষা প্রদান। যৌন হয়রানি সম্পর্কে ডিএমপিতে কর্মরত সকল পুলিশ সদস্যের মাঝে সচেতনতা গড়ে তোলা। যৌন হয়রানিমূলক আচরণ থেকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে কর্মরত সকল সদস্যকে বিরত রাখা।

অভিযোগ গ্রহণকারী কমিটিঃ মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিটি কর্মক্ষেত্রে একটি অভিযোগ গ্রহণকারী কমিটি গঠন করতে হবে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের জন্য কমিটির গঠনতন্ত্র হবে নিম্নরুপ –

(ক) কেন্দ্রীয় অভিযোগ গ্রহণ কমিটি: অভিযোগ গ্রহণ, অনুসন্ধান পরিচালনা এবং সুপারিশ করার জন্য জেন্ডার ব্যালেন্সের ভিত্তিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি ‘কেন্দ্রীয় অভিযোগ গ্রহণ কমিটি’ গঠন করা হবে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কেন্দ্রীয় অভিযোগ গ্রহণ কমিটি নিম্নরূপ :

১. অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (এ্যাডমিন), ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ।- সভাপতি

২. উপ-পুলিশ কমিশনার (উইমেন সাপোর্ট এন্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন), ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। -সদস্য সচিব।

৩. উপ-পুলিশ কমিশনার (সদর দপ্তর ও প্রশাসন) ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। -সদস্য

৪. বিভাগীয় মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, ঢাকা। – সদস্য

৫. যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও জেন্ডার বিষয়ক এনজিও প্রতিনিধি। -সদস্য

(খ) বিভাগীয় অভিযোগ গ্রহণ কমিটিঃ কেন্দ্রীয় অভিযোগ গ্রহণ কমিটি ব্যতীত ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের আওতাধী ৫৭টি বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জেন্ডার ব্যালেন্সের ভিত্তিতে স্বতন্ত্র ‘বিভাগীয় অভিযোগ গ্রহণ কমিটি’ গঠন করবে।

(গ) এড হক কমিটি: অভিযোগ গ্রহণ কমিটির কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনয়ন করা হলে উক্ত অভিযোগ অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অভিযোগ প্রাপ্তির ১০ (দশ) কার্যদিবসের মধ্যে অভিযুক্ত সদস্যকে বাদ দিয়ে নতুন সদস্য করে একটি এড হক কমিটি (অন্তর্বর্তীকালীন কমিটি) গঠন করবেন। উক্ত কমিটির সভাপতি হবেন অভিযুক্ত ব্যক্তি অপেক্ষা উর্ধ্বতন পদে আসীন কোনো ব্যক্তি।

ঢাকা মহানগর এলাকায় নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা রোধকল্পে তাদের অধিকারকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি), ঠিক তেমনি ডিএমপিতে কর্মরত  সকল নারী সদস্যদের জন্যে নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতেও বদ্ধপরিকর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ।

এমন আরও সংবাদ

Back to top button