হাওরে আগাম ধান কাটতে ব্যস্ত কৃষক
আগাম বন্যা ও উজান থেকে বয়ে আসা পাহাড়ি ঢলে কিশোরগঞ্জ হাওরে প্রায় এক হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান আগামী পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকরা আধাপাকা ধান কাটতে শুরু করেছে। এ বছর ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে পাহাড়ি ঢলে নদ-নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় হাওরে নদী অববাহিকায় এবং চরাঞ্চলের নিচু জমিতে হঠাৎ পানি ঢুকে পড়ে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়ে কৃষক। বোরো ধানের তোড় আসার সঙ্গে সঙ্গে পানি ঢুকে পড়ায় তা পুষ্ট হতে পারেনি। কৃষকের স্বপ্নের ফসল এই বোরো ধান অপুষ্ট অবস্থায় শুধুমাত্র গো-খাদ্যের জন্য কেটে ফেলছেন।
এখনও বোরো মৌসুম শুরু হতে ১৫ দিন বাকী। এরই মধ্যে জেলায় ইটনা উপজেলার জিওলের হাওর, ধনপুর ইউনিয়নের হাপানিয়া হাওর, মিঠামইন উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের চিরুন্দের হাওরের পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ বছর হাওরবেষ্টিত ইটনা উপজেলায় ২৫ হাজার ৮৩০ হেক্টর, মিঠামইন উপজেলায় ১৬ হাজার ২০০ হেক্টর, অষ্টগ্রামে ২৫ হাজার ৫৯৫ হেক্টর, নিকলী উপজেলায় ১৪ হাজার ২৯৫ হেক্টর, তাড়াইল উপজেলায় ১২ হাজার ৫৯৫ হেক্টর, করিমগঞ্জ উপজেলায় ১০ হাজার ৩০ হেক্টর ও বাজিতপুরে ৬ হাজার ৬৭৫ হেক্টর জমির বোরো আবাদ হয়। আগামী পানি আসায় হাওর এলাকার কৃষকরা চিহ্নিত।
এদিকে আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাবাসে বলেছে হাওরাঞ্চলে আগামী ৫ দিন ভারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এতে করে নদ-নদীর পানি বেড়ে যাওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। হাওরে এলাকার জন্য নির্মিত বাঁধ সঠিক সময়ে মেরামত করতে না পারায় পানির উচ্চতা আর সামান্য বৃদ্ধি পেলেই বাঁধ ভেঙ্গে পানি হাওরের বিস্তৃর্ণ মাঠে ছড়িয়ে পড়বে। এদিকে ইটনা উপজেলায় দ্রুত ধান কাটার জন্য কৃষি বিভাগ ১৬টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন প্রদান করেছে। হাওরাঞ্চলে মৌসুমী শ্রমিক না আসায় কৃষকেরা বিপাকে পড়েছে। কেননা বোরো ধান কাটার মৌসম শুরু হতে আরও ১৫ দিন বাকী থাকায় এ সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।
ঘগড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুখলেছুর রহমান ভূঞা জানান, স্থানীয় কৃষকরা প্রাণপণ চেষ্টা করে প্রবল স্রোতের চাপ থেকে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করছেন। তাছাড়াও ঘোড়াউত্রা নদীর কুনকুনিয়া বাঁধ দিয়ে পানি ভিতরে প্রবেশ করছে। এতে করে প্রায় সাড়ে ৩শ হেক্টর জমির ধান তলিয়ে গেছে। বাঁধগুলো দ্রুত সংস্কার না করলে যে কোন সময় ভেঙ্গে আরও বেশি পানি হওরে ঢুকে পড়বে।
কিশোরগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. ছাইফুল আলম জানান, ইতিমধ্যে হাওরে আগাম জাতের কিছু কিছু ধান পাকা শুরু হয়েছে। আগাম বন্যা থেকে হাওরের একমাত্র ফসল বাঁচাতে কৃষকদেরকে ৮০ শতাংশ পাকা ধান কাটার পরামর্শ দিচ্ছেন।
কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মতিউর রহমান জানান, প্রকল্প এলাকার বাহিরে, নদী ও খালের মধ্যে এ পানি ঢুকেছে। সেখানে আমাদের বাঁধ নেই। ২ মিটার পানি বৃদ্ধি হলে মূল হাওরে পানি ঢুকে পড়বে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম জানান, মূল হাওরে পানি উঠেনি। ফসল রক্ষা বাঁধ কোথাও ভাঙেনি। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নদী অববাহিকায় যেসব বোরো জমি রোপন করা হয়েছিল তা কিছুটা নষ্ট হয়েছে, তাদের প্রণোদনার জন্য আমরা সরকারের কাছে লিখবো।