রংবেরঙ

দৃষ্টি মুগ্ধকর পাখির পালকে বর্ষার রং

এক্সক্লুসিভ নিউজ, রংবেরঙ ডেস্ক : ছুটির দিনের ভোরবেলায় বেশ বৃষ্টি হলো। সকালের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টি থেমেও গেল। গত সপ্তাহে এ রকম এক চমৎকার সকালে ঢাকার বোটানিক্যাল গার্ডেনে পাখি দেখতে গেলাম। চারদিক অসম্ভব সুন্দর সবুজ। গাছগুলোতে সবে কচি পাতা গজিয়েছে। নিরিবিলি এ পথটাতে পাখিরা তড়িঘড়ি করে একসঙ্গে বের হয়েছে খাবার খেতে। সব পাখিই চেনা প্রজাতির।

কিন্তু তাদের দেখলে মনে হবে প্রতিটি প্রজাতির গায়ের রঙের কিছুটা ভিন্নতা আছে। মাত্র পাঁচ মিনিটেই পেয়ে গেলাম দুই জোড়া দামা। কী অসম্ভব সুন্দর গায়ের রং, বুকটা টকটকে কমলা। পোকা ধরে ধরে খাচ্ছে। পরিবারের অন্য সদস্যদের জন্যও নিয়ে যাচ্ছে। প্রজনন মৌসুমটাতে তাদের পালকের রংটাই যেন চোখে ভাসে!

গরমকাল প্রায় সব আবাসিক পাখিরই প্রজননকাল। বৃষ্টি নামার সঙ্গে সঙ্গে বনে পোকামাকড় বেড়ে যায়। সব পোকাখেকো পাখি এ সময় সংসার সাজায়। প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক পাখি বছরে অন্তত একবার তাদের পালক বদলায়। যেন নতুন পোশাকে তাদের নতুন করে জীবন শুরু হয় পরের মৌসুমের জন্য।

শীতে আমাদের দেশে যেসব হাঁস-পাখি বা সৈকত-পাখি আসে, গ্রীষ্মে নিজ প্রজননভূমিতে তাদের গায়ের রং দেখলে চেনা যায় না। সারা শরীরে পালকের রং পরিবর্তন হয়। পুরুষের এই উজ্জ্বলতা আবার বেশি। পুরুষ পাখির রঙে স্ত্রী পাখি আকৃষ্ট হয়। এভাবে স্ত্রী পাখিটিকে আকৃষ্ট করে জোড় বাঁধে পুরুষ পাখি।

সংসার শেষে হাঁস-পাখির শরীরের পুরো পালক ঝরে পড়ে। পালকবিহীন পাখিরা খুব বেশি উড়তে পারে না। তুন্দ্রাঞ্চল শত্রুহীন বলেই এ অবস্থায় টিকে থাকতে সমস্যা হয় না। খুব দ্রুতই পাখিগুলোর শরীরে নতুন পালক গজায়। নতুন পোশাকে পাখিগুলো ফিরে আসে আমাদের দেশে। আমাদের আবাসিক পাখিদের এ রকমটি হওয়ার সুযোগ কম। বর্ষায় প্রায় সব পাখির পালক বদলায়।

কিছু কিছু পাখিকে বর্ষায় দেখলে একেবারেই অচেনা লাগে। এই ধরুন, আমাদের সবার চেনা সাদা গো বগা। বর্ষায় এর শরীরের পালকের পরিবর্তন হয়। অসম্ভব সুন্দর গাঢ় কমলা রঙে ভরে যায় বুক। এ সময় যেকোনো পাখি কলোনিতে গেলে মনে হবে যেন একটি রঙিন পাখির শহর। অন্য বগাদের শরীরের পালকেও ভিন্নতা আসে।

বনের পাখির মধ্যে ময়ূরের রঙিন পাখার খবর আমরা জানি। বর্ষায় পুরুষ ময়ূর পেখম তোলে। ময়ূরের পালক পাখির চেয়েও বড় হয়। কী অসাধারণ দেখতে! তাদের এই পালকের রঙে মুগ্ধ হন নকশাকারেরা। অনেক নকশাকার পালকের রঙে মুগ্ধ হয়ে ধার নেন অনেক রং আর বৈচিত্র্য।

তবে বুনো ময়ূর আর আমাদের দেশে টিকে নেই। বনগুলোও তাই কিছুটা বিবর্ণ। তবে উত্তরের শালবনে বর্ষায় কারও যাওয়ার সুযোগ হলে অসম্ভব সুন্দর এক পাখির দেখা পাবেন। বনজুড়ে সারাক্ষণ তার গান শুনতে পাবেন। পাখিটির নাম দেশি শামচা। এরা আমাদের বর্ষায় পরিযায়ী। এত সুন্দর রঙের বনের পাখি খুব কমই দেখা যায়।

বর্ষার জলার ধারে গেলে আর একটি পাখিতে মুগ্ধ হবে সবাই। নাম তার নেউ পিপি। পুরুষ পাখিটির কালো সরু লেজটি তার শরীরের চেয়েও বড় হয়। সাদা-কালোর এক দারুণ কম্বিনেশনে পাখিটি পুরো জলাশয়কেই আকর্ষণীয় করে তোলে। সারাক্ষণ নেউ নেউ করে ডাকে। জোড় বাঁধা শেষে স্ত্রী পাখিটি ডিম দিয়ে পুরো সংসার ছেড়ে দেয় পুরুষটির কাঁধে। শীত নামার সঙ্গে সঙ্গে তার লেজটি খুলে পড়ে যায়।

শীতে পাখি দেখিয়েরা বের হন পাখি দেখতে, আর বর্ষায় বের হন পাখির রং দেখতে। পাখির রং আর বৈচিত্র্যই আমাদের শিখিয়েছে কীভাবে জীবনের বৈচিত্র্য বাড়ানো যায়। আমরা শিখেছি কীভাবে সাজতে হয়। যাঁরা এ ভাবনাটা মাথার ভেতর নেননি, তাঁরা এখনই বেরিয়ে পড়তে পারেন। কাছের কোনো বন বা জলাশয়ে খেয়াল রাখুন। অপরূপ সাজের প্রাণবৈচিত্র্যে সত্যিই আপনি মুগ্ধ হবেন।

সীমান্ত দীপু, বন্য প্রাণী গবেষক

এমন আরও সংবাদ

Back to top button