স্থানীয় সরকারের ১৮৯ ভোটের পরীক্ষায় নতুন কমিশন
এক্সক্লুসিভ নিউজ, ঢাকা : সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দায়িত্ব নিয়ে প্রথমবারের মতো একসঙ্গে ১৮৯টি ভোটের পরীক্ষার মুখোমুখি হতে যাচ্ছে কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন। কুমিল্লা সিটি করপোরেশন, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদসহ মোট ১৮৯টি ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বুধবার (১৫ জুন)।
তবে এসব ভোটের মধ্যে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) ভোটকে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে আউয়াল কমিশন। ভোটের এ পরীক্ষায় এখন পর্যন্ত শক্তভাবেই প্রস্তুতির জানান দিচ্ছে নতুন কমিশন। যার প্রতিফলনও ঘটছে প্রতিনিয়ত। ইতোমধ্যে আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে বেশ কয়েকটি ইউপিসহ পৌর ভোট স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কুমিল্লা সিটি ভোটেও হুঁশিয়ারি দিয়ে ইসি বলেছে, অনিয়ম হলেই ভোট বন্ধ করে দেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি কে এম নুরুল হুদা কমিশনের মেয়াদ শেষ হয়। অনুসন্ধান কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ ২৬ ফেব্রুয়ারি কাজী হাবিবুল আউয়ালকে প্রধান নির্বাচন কমিশন (সিইসি) হিসেবে নিয়োগ দেন। একই সঙ্গে চার কমিশনার হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ বেগম রাশিদা সুলতানা, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবীব খান, অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর ও অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিব আনিছুর রহমানকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এই কমিশনের অধীনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জনসংযোগ পরিচালক ও যুগ্ম সচিব এস এম আসাদুজ্জামান জানান, কুসিক ভোটের সব কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। বুধবার সকাল ৮টা থেকে ভোট চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। একই দিন একটি উপজেলায় সাধারণ নির্বাচন ও তিনটি উপজেলায় বিভিন্ন পদে উপনির্বাচন, পাঁচ পৌরসভায় সাধারণ ও একটি ওয়ার্ডে উপনির্বাচন, ১৩২টি ইউনিয়নে সাধারণ ও ৪৭টি ইউপিতে বিভিন্ন পদে উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে কুসিক, ১৩২ ইউপি ও দুটি পৌরসভায় ভোটগ্রহণ হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)।
কুমিল্লা সিটির ভোট নিয়ে সোমবার (১৩ জুন) রাত ১২টায় প্রচারের সময় শেষ হয়েছে। এছাড়া ভোটের ফলাফল গেজেট আকারে প্রকাশ করা পর্যন্ত কোনো প্রকার মিছিল, বিজয় মিছিল, মশাল মিছিল, র্যালি, শোভাযাত্রা না করতে নির্দেশনা দিয়েছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যে বৈধ অস্ত্র বহনের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ থাকবে ১৭ জুন পর্যন্ত।
এদিকে কুমিল্লা সিটির ভোটে প্রত্যেক ভোটকেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন থাকবে। নির্বাচনের প্রতিটি সাধারণ ভোট কেন্দ্রে ১৫ জন করে এবং গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৬ জন করে সার্বক্ষণিকভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। এছাড়া নির্বাচনী এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স নিয়োগ করা হয়েছে। ভোটের এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পুলিশ, আনসার ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে গঠিত প্রতি ওয়ার্ডে একটি করে মোট ২৭টি মোবাইল টিম এবং ৯টি স্ট্রাইকিং টিম রয়েছে। এছাড়া রিজার্ভ টিম আছে দুটি। র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) ২৭টি মোবাইল টিম এবং ১২ প্লাটুন বিজিবি নিয়োজিত থাকছে এ সিটিতে।
ভোটের এলাকায় প্রচার শুরুর আগে থেকেই বিজিবির একটি অংশ অবস্থান নিয়েছে।
কুমিল্লা সিটিতে মেয়র পদে ছয় প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। তারা হলেন— আওয়ামী লীগ মনোনীত আরফানুল হক রিফাত, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. রাশেদুল ইসলাম, স্বতন্ত্র হিসেবে কামরুল আহসান বাবুল, মো. মনিরুল হক সাক্কু (বিএনপি নেতা ও দুইবারের মেয়র), মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন ও মাসুদ পারভেজ খান। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মাসুদ পারভেজ খান প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। অর্থাৎ মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে পাঁচ প্রার্থী। এছাড়া সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর মিলে ১৪০ জনের মতো প্রার্থী আছে ভোটের মাঠে। এ নির্বাচনে ৫ নম্বর ও ১০ নম্বর ওয়ার্ডে দুজন কাউন্সিলর প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
কুমিল্লা সিটিতে ভোটগ্রহণ হবে সম্পূর্ণ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে। ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ১০৫টি ভোটকেন্দ্রের ৬৪০টি ভোটকক্ষে। কুসিকের ২৭টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার রয়েছে ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০ জন। এদের মধ্যে ১ লাখ ১৭ হাজার ৯২ জন নারী ভোটার এবং পুরুষ ভোটার ১ লাখ ১২ হাজার ৮২৬ জন। এছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছে দুজন।
আইন অনুযায়ী, প্রথম সভা থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর হয় নির্বাচিত কর্পোরেশনের মেয়াদ। কুমিল্লা সিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২২ সালের ১৬ মে। আর ভোটগ্রহণ করতে হয় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ১৮০ দিনের মধ্যে। এ হিসেবে গত বছরের ১৬ নভেম্বর থেকে এ সিটি নির্বাচনের সময় গণনা শুরু হয়। সর্বশেষ কুমিল্লা সিটি ভোট হয়েছিল ২০১৭ সালের ৩০ মার্চ। নির্বাচিত কর্পোরেশনের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল ওই বছরের ১৭ মে। এক্ষেত্রে ভোটগ্রহণ ১৬ মের মধ্যে করার কথা থাকলেও নির্বাচন কমিশন ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু বিগত কমিশন বিদায়ের সময় ঘনিয়ে আসায় আর তফসিল দেয়নি। ফলে অতি অল্প সময়ের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে এই সিটি পরিচালনায় দায়িত্ব দিতে হয়েছে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে। নির্বাচনের পর নতুন মেয়র দায়িত্ব গ্রহণ করা পর্যন্ত তিনি কর্পোরেশন পরিচালনা করবেন।