খুলনার দাকোপে ১৫০ কোটি টাকার বাঁধ পানিতে
এক্সক্লুসিভ নিউজ, খুলনা : একসময় তাঁর গোয়াল ভরা গরু ছিল, পুকুর ভরা ছিল মাছ। এসব এখন তাঁর নিজের কাছেই কল্পকাহিনির মতো মনে হয়। খরস্রোতা ঢাকী।
নদী একের পর এক গিলে খেয়েছে বসতভিটা, সহায়-সম্বল সব।
কান্নাভেজা কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন খুলনার উপকূলীয় উপজেলা দাকোপের গুনারী গ্রামের সরোজিত মণ্ডল। নদীভাঙনে বসতভিটাসহ অর্ধশত বিঘা চাষাবাদের জমি খুইয়ে তিনি এখন সর্বস্বান্ত। মাথা গোঁজার মতো ঠাঁইও নেই তাঁর।
শিবসা ও ঢাকী নদীর মোহনা গুনারী কালীবাড়ী এলাকায় বসবাসকারী শরৎ সরদার, রবীন্দ্রনাথ মণ্ডল, দীবাকর সরদার, নিরোদ সরদার, প্রভাষ সরদারসহ অন্যদের কণ্ঠেও ধ্বনিত হলো একই হাহাকার। এক সময়ের সল্ফ্ভ্রান্ত পরিবারগুলো নদীভাঙনে সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে। এমন পরিবারের সংখ্যা তিন শতাধিক।
এ এলাকার সর্বহারা মানুষগুলো ভাঙনকবলিত এলাকায় গত মঙ্গরবার মানববন্ধনেও দাঁড়িয়েছিলেন। তাঁদের ক্ষোভ নদীর গতিপ্রকৃতি না বুঝে বিশ্বব্যাংক থেকে নেওয়া ১৫০ কোটি টাকা ঋণে নির্মিত বেড়িবাঁধ কামারখোলা ও সুতারখালী ইউনিয়নবাসীর কোনো কাজেই আসেনি। বরং মেগা প্রকল্পের নামে সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থের অপচয় হয়েছে। ফলে এলাকার বাসিন্দারা ভাঙন রোধে আগে নদী শাসন করে ডাম্পিং ব্যবস্থাসহ পরিকল্পিত, নিরাপদ ও টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।
এলাকাবাসী জানান, তাঁরা ত্রাণ চান না, তাঁরা এ ভাঙন থেকে চিরতরে পরিত্রাণ চান। তারা বাঁচতে চান, টেকসই বাঁধ চান। জন্মভিটায় টিকে থাকতে তাঁরা পাউবোর ৩২ নং পোল্ডার এলাকায় ভাঙন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। অন্যথায় দুটি ইউনিয়নের অর্ধ লক্ষ মানুষ আইলার মতো ফের প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকিতে আছেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
কামারখোলা ইউপি চেয়ারম্যান পঞ্চানন মণ্ডল ও সুতারখালী ইউপি চেয়ারম্যান মাসুম আলী ফকির জানান, নদীভাঙনে এ দুই ইউনিয়নে তিন শতাধিক পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে। খরস্রোতা শিবসা ও ঢাকী নদী শাসন না করে বাঁধ নির্মাণ করায় আবারও ইউনিয়নবাসীকে আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে। বাঁধগুলো সংস্কারের জন্য পাউবো কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও তারা সময়মতো কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় গুনারী কালীবাড়ীসহ পোল্ডারের বিভিন্ন স্থানের বাঁধে ভয়াবহ ফাটল ও ভাঙন দেখা দিয়েছে। বাঁধগুলো দ্রুত সংস্কার করে দুটি ইউনিয়নবাসীকে রক্ষার জন্য তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে জোর দাবি জানান।
উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ আবুল হোসেন বলেন, কিছু কিছু জায়গায় নদী শাসন না করে বাঁধ নির্মাণ করায় সেসব স্থানে ভয়াবহ ফাটল ও ভাঙন দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে গুনারী কালীবাড়ী নামক স্থানে দ্রুত বাঁধ নির্মাণ করা না হলে যে কোনো সময় বাঁধটি ঢাকী নদীতে বিলীন হয়ে আইলার মতো মহাবিপর্যয় ঘটতে পারে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল আলম বলেন, নদী শাসনের পর এ স্থানে টেকসই বাঁধ নির্মাণ করা হবে।