রুশ অর্থনীতিতে সংকট ক্রমে স্পষ্ট হচ্ছে
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইউক্রেনে রুশ হামলা সপ্তম মাসে প্রবেশ করেছে। এ পর্যায়ে চলমান যুদ্ধ থামার সম্ভাবনা না থাকলেও দীর্ঘ হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে। গত শুক্রবার ফরাসি এক টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানিয়েছেন সাবেক রুশ প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ। অথচ বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অর্থনীতিটি ক্রমে দুর্বল হচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএনের এক বিশ্লেষণে।
এতে বলা হয়, ইউক্রেনে হামলার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা রাশিয়ার ওপর দফায় দফায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। দেশটির জ্বালানি ও আর্থিক খাতকে লক্ষ্য করে যেসব নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, তা নজিরবিহীন। তবে এসব নিষেধাজ্ঞা রুশ অর্থনীতিকে যতটা দ্রুত কাবু করতে পারবে বলে পশ্চিমারা আশা করেছিল, তা হয়নি।
শুধু তা-ই নয়, যুদ্ধ শুরুর পর রুশ রুবল মার্কিন ডলারের বিপরীতে রেকর্ড মান হারালেও সম্প্রতি তা এতটাই ঘুরে দাঁড়িয়েছে যে তা ২০১৮ সালের পর সবচেয়ে শক্তিশালী হয়েছে। যুদ্ধ শুরুর পর সাময়িক অস্থিরতার পর দেশটির আর্থিক খাত ও বাজারও বেশ স্থিতিশীল পর্যায়ে চলে এসেছে।
এপ্রিলে মূল্যস্ফীতি ১৮ শতাংশে পৌঁছালেও তা ক্রমে কমছে। চলতি বছরজুড়ে তা ১২ থেকে ১৫ শতাংশের মধ্যে থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অন্যদিকে যুদ্ধের শুরুর দিকে দেশটির মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) চলতি অর্থবছরে ৮ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত সংকুচিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলেও তা সম্প্রতি ৪ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে নেমে এসেছে। এসবের জন্য দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংককেই কৃতিত্ব দিতে চান নতুন রাশিয়ার অর্থনীতি উন্নয়নবিষয়ক সাবেক মন্ত্রী আন্দ্রেই নেচায়েভ।
সোভিয়েত ইউনিয়নের আনুষ্ঠানিক বিলুপ্তির পর রাশিয়ার বিপর্যস্ত অর্থনীতির হালধারী আন্দ্রেই নেচায়েভের ভিন্ন পর্যবেক্ষণও রয়েছে। সিএনএনকে তিনি বলেছেন, জীবনযাপনের মানের বিচারে রুশ নাগরিকদের প্রকৃত আয়ের বিষয়টি বিবেচনায় নিলে রাশিয়া প্রায় ১০ বছর পিছিয়ে গেছে।
আন্দ্রেই নেচায়েভের এ ধরনের মন্তব্যের বাস্তব কারণ আছে। বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি রুশ জ্বালানি খাতকে চাঙা করলেও তা দেশটির সাধারণ মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। ইউরোপের অন্য দশটি অর্থনীতির মতো রাশিয়াতেও জীবনযাপনের ব্যয় বাড়ছে। রুশ সরকার নানাভাবে এসব সংকট মোকাবিলার চেষ্টা করছে। গত মে মাসে সরকার পেনশন ও সর্বনিম্ন মজুরি ১০ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে।
আরেকটি বড় ধাক্কা হলো, যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়ার সেমিকন্ডাক্টর আমদানি প্রায় ৯০ শতাংশ কমেছে। ফলে গাড়ি থেকে শুরু করে কম্পিউটার তথা প্রায় প্রতিটি বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম খাত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ভবিষ্যতে এটা আরও তীব্র হবে। এ অবস্থায় রুশ অর্থনীতির পতন শুরু হয়েছে বলে মনে করেন আন্দ্রেই নেচায়েভ।