খেলাধুলা

রিয়াদকেই চান সাকিব

cricateএক্সক্লুসিভ ডেস্ক: অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার ছায়ায় আর বেশিদিন থাকার সুযোগ হবে না তার। ধরে নেয়া যেতেই পারে ২০১৯-ই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মাশরাফির শেষ বছর। সেটা যদি পুরো বছরও হয় তাহলে আর ১২ মাস মাশরাফিকে লিডার হিসেবে পাবেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এরপরের লং রানে তার অধিনায়ক হবে সাকিব আল হাসান। এখন শর্টার ফরম্যাটে রিয়াদের কাছ থেকে কেমন সার্ভিস চান অধিনায়ক সাকিব? বা কেমন খেলা আশা করবেন সাকিব?

কাল (বৃহস্পতিবার) ম্যাচ শেষে প্রেস কনফারেন্সে রিয়াদের অকুণ্ঠ প্রশংসা করে সাকিব জানিয়ে দিলেন, ‘আমি চাই পজিটিভ রিয়াদ ভাইকে। যিনি উইকেটে এসে চটপট কিছু শট খেলে প্রতিপক্ষ বোলিংয়ের বিষদাঁত ভেঙে দেবেন আর নিজে সাহসী হয়ে উঠবেন। আমি লক্ষ্য করেছি রিয়াদ ভাই যেদিন তেড়েফুঁড়ে শুরু করেন এবং শুরুতেই হাত খুলে খেলেন সেদিনই তার ব্যাট জ্বলে ওঠে এবং নামের পাশে বড় ইনিংস যোগ হয়।’

সাকিবের এই উপলব্ধি বা পর্যবেক্ষণ একদম সঠিক। নিজের পুরো ক্যারিয়ার জুড়ে যখনই শুরুতে রয়েসয়ে ইনিংস বড় করার চেষ্টা করেছেন রিয়াদ, সফল হয়েছেন খুব কম সময়েই। এর চেয়ে বরং উইকেটে এসে শুরু থেকেই যখন ইতিবাচক থেকে নিজের পছন্দের শটস খেলতে থাকেন, সেদিনই সবচেয়ে ছন্দে থাকেন রিয়াদ।

যার প্রমাণ মিলেছে বৃহস্পতিবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচেও। তামিম-লিটন ও লিটন সৌম্যের দুটি দুর্দান্ত জুটির পর ছোট্ট একটা মোড়ক লাগে বাংলাদেশের ইনিংসে। ১০ রানের ব্যবধানে পড়ে যায় তিন উইকেট, তখনো ইনিংসের বাকি ৭ ওভার।

অমন অবস্থায় উইকেটে এসে রিয়াদ চাইলেই সময় নিতে পারতেন ২-৩ বল, এরপর মেরে খেলা ধরতে পারতেন। কিন্তু তা না করে মুখোমুখি প্রথম বলেই খানিক জায়গা পেয়ে স্কয়ার কাটে পয়েন্ট বাউন্ডারিতে চার মারেন রিয়াদ। পরের বল উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে এক্সট্রা কভার দিয়ে আর পরের বলে আবারও স্কয়ার কাটে পয়েন্ট দিয়ে চার।

নিজের প্রথম তিন বলেই চার মেরে আত্মবিশ্বাসের বার্তাটা অপর প্রান্তে থাকা অধিনায়ক সাকিবের মাঝে পৌঁছে দেন রিয়াদ। যে আত্মবিশ্বাস ও নিজেদের সামর্থ্যের প্রতি আস্থা রেখে শেষের ৪২ বলে ৯১ রানের জুটি গড়েন সাকিব ও রিয়াদ। বাংলাদেশও পায় নিজেদের ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ।

এ জুটির মেরে খেলার কাজটাও করেন রিয়াদই। মাত্র ২১ বলে ৭ চারের মারে ২০৫ স্ট্রাইকরেটে অপরাজিত ৪৩ রান আসে তার ব্যাট থেকে। সাকিবের মতে যখনই ইতিবাচক শুরু করেন, তখনই ভালো ইনিংস আসে রিয়াদের ব্যাট থেকে। এ কথা বলতে গিয়ে সাকিব টেনে আনেন চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে কার্ডিফের সেই নিউজিল্যান্ড বধের কথা।

যেখানে পঞ্চম উইকেটেই ২২৪ রানের রেকর্ড জুটি গড়ে বাংলাদেশকে জয় এনে দিয়েছিলেন সাকিব ও রিয়াদ। সেদিনও চাপের মুখে খেলতে নেমে ‘শুরু থেকেই আত্মবিশ্বাসী’ ছিলেন রিয়াদ। উইকেটের চারপাশে শটস খেলে সাকিবের ওপর থেকে চাপ কমিয়ে দেন তিনি।

সে ম্যাচের কথা মনে করিয়ে দিয়ে সাকিব বলেন, ‘কার্ডিফের ইনিংসটা যদি দেখেন উনি কিন্তু কিন্তু সময় নেনি, উনি প্রথমে আক্রমণ করেছেন। আমার কাছে মনে হয় উনার এই অ্যাপ্রোচ ছোট সংস্করণের জন্য অনেক ভাল। এমনকি টেস্টেও যদি প্রথমে মারতে পারে উনার জন্য যেটা হয় উনার শরীর চলা শুরু হয়ে যায়, ফিট মুভমেন্ট ভাল হয়ে যায়। সাধারণ এসব জায়গায় ইনিংসটা উনি বড় করতে পারেন। আমি মনে করি উনার এটা ঠিক অ্যাপ্রোচ।’

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের বর্তমান প্রধান স্টিভ রোডসের মতে মাঠের অধিনায়কত্বে সাকিব তার মাথার প্রয়োগ করেন অনেক বেশি। যা তাকে এগিয়ে দেয় ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে। এর ছাপ পাওয়া ব্যাট-বল হাতে সাকিবের উজ্জ্বল পারফরম্যান্সেই।

সেই সাকিবই খুব কাছ থেকে দেখেছেন অতি সাবধানী রিয়াদের চেয়ে আত্মবিশ্বাসী এবং নিজের সামর্থ্যের প্রতি আস্থাবান রিয়াদই বেশি কার্যকর। এবার রিয়াদের নিজের বোঝার পালা ঠিক কোনভাবে নিজের ইনিংস এগিয়ে নেয়া উচিৎ তার। সাকিবের কথা মতো শুরু থেকেই আত্মবিশ্বাসী ব্যাটিং করতে পারলে রিয়াদের নিজের পাশাপাশি দলেরও যে অনেক বেশি লাভ।

 

 

এমন আরও সংবাদ

Back to top button