তানজিলা আক্তার ইভা (৩৪)। কখনো তার পরিচয় মেরী নামে। কারও কাছে মাহি নামে। অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনার দৌড়। তবে সবার কাছে বলতেন ‘এ’ লেভেল শেষ করে কম্পিউটার সায়েন্সে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে যুক্তরাজ্যের একটি সফটওয়্যার ফার্মে কাজ করছেন। ফেসবুক, ইনস্ট্রাগ্রাম, টিকটকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একাউন্ট খুলে আকর্ষণীয় ভঙ্গিময় ছবি এবং ভিডিও পোস্ট করতেন। টার্গেট করা ব্যক্তিদের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাতেন ইভা। আবার অনেকের সঙ্গে ম্যাসেঞ্জারে যোগাযোগ করতেন। নিজের আসল পরিচয় লুকিয়ে কারও কারও সঙ্গে প্রেমের অভিনয় করে যেতেন।
এভাবে ধীরে ধীরে টার্গেট করা ব্যক্তিদের সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করে তোলেন। গুলশান ও বনানীর অভিজাত হোটেলে লাঞ্চ ও ডিনারেও অনেককে আহ্বান করতেন। প্রেমের অভিনয় চলাকালে অনেকের অসতর্ক মুহূর্তের ছবি তুলে রাখতেন। আবার কারও সঙ্গে চালিয়ে যাওয়ায় ‘অশ্নীল’ কথোপকথন ও ম্যাসেজ সংরক্ষণ করে রাখতেন। অনেককে আবার হোটেলে নাইট পার্টি, স্পা সেন্টার ও বারে আমন্ত্রণ জানাতেন। এরপর সুকৌশলে হাতিয়ে নিতেন লাখ লাখ টাকা। প্রতারণার ফাঁদে ফেলে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক নেতা ও চাকরিজীবীসহ বিভিন্ন পেশার ১০ জনকে বিয়েও করেছেন। তবে শেষ পর্যন্ত কোনো বিয়ে তার টেকেনি। আর প্রেমের ফাঁদে ফেলে সর্বশান্ত করেছেন শতাধিক ব্যক্তিকে। তার বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফি, প্রতারণাসহ তিনটি মামলা রয়েছে। এরই মধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) ইভাকে গ্রেপ্তার করে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়েছে।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশিদ বলেন, ‘কিছু দিন আগে মাসুম বিল্লাল ফারদিন রাজু নামে একজন প্রতারককে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার তদন্ত করতে গিয়ে ইভার নামটি সামনে আসে। ফারদিন ও ইভা মিলে বড় একটি চক্র গড়ে তুলেছিল। প্রতারণা করে হাতিয়ে নেওয়া অর্থ দুজন ভাগাভাগি করে নিতেন। প্রতারণা ও প্রেমের অভিনয়ই এই চক্রের পেশা।’
ডিবি জানায়, ২০০৩ সালে পারিবারিকভাবে প্রতিষ্ঠিত এক বেসরকারি চাকরিজীবীর সঙ্গে ইভার প্রথম বিয়ে হয়েছিল। লাগামহীন জীবন-যাপনের জন্য ২০১০ সালে স্বামীর সঙ্গে বিয়ে বিচ্ছেদ হয়।
পুলিশ জানায়, রাজধানীর বসুসন্ধরা এলাকায় বাসা থেকে একা থাকতেন ইভা। গ্রেপ্তারের পর তার কাছ থেকে ছয় লাখ ৭০ হাজার টাকা, তিনটি আইফোন ও সীসা টানার সরঞ্জামাদি জব্দ করা হয়।
পুলিশ বলছে, পরিচয় নিশ্চিত না হয়ে ফেসবুকে কারও ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট গ্রহণ না করা, অবৈধভাবে চাকরি, বদলি ও বিদেশে যাওয়ার জন্য টাকা না দেওয়া, বাহ্যিক চাকচিক্য দেখে বন্ধুত্ব না করা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সতর্কতার সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে।