পানির উৎস সুরক্ষায় ইসলাম যা বলে

নিরাপদ পানির গুরুত্ব : আরবি ভাষায় পানির সমার্থক শব্দ ‘মাউন’। পবিত্র কোরআনে শব্দটি ৬৩ বার ব্যবহৃত হয়েছে। ইসলামী শরিয়তে পানির রং, গন্ধ ও স্বাদ স্বাভাবিক থাকলে তা সাধারণ পবিত্র হিসেবে বিবেচিত হয়। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘তিনি নিজ অনুগ্রহে সুসংবাদবাহী বায়ু পাঠান এবং আমি আকাশ থেকে বিশুদ্ধ পানি বর্ষণ করি। যা দিয়ে আমি মৃত ভূখণ্ডকে সঞ্জীবিত করি এবং আমার সৃষ্টির মধ্যে অনেক জীবজন্তু ও মানুষকে তা পান করাই।’ (সুরা : ফোরকান, আয়াত : ৪৮-৪৯)
বৃষ্টির পানি থেকে চাষাবাদ : চাষাবাদের ক্ষেত্রে পরিমিত বৃষ্টির পানি সর্বোত্তম সহযোগিতা করে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আপনি কি দেখেন না, আল্লাহ আকাশ থেকে বৃষ্টিপাত করেন, অতঃপর আমি তা দিয়ে বিভিন্ন বর্ণের ফলমূল উৎপন্ন করি, আর পাহাড়ের মধ্যে রয়েছে বিচিত্র বর্ণের পথ-সাদা, লাল ও নিকষ কালো।’ (সুরা : ফাতির, আয়াত : ২৭)
ঝরনার পানির প্রবাহ : পাহাড়ি অঞ্চলে বৃষ্টির মাধ্যমে পানির সরবরাহ হয়। বৃষ্টির প্রবল বর্ষণ বিভিন্ন অঞ্চলের ঝরনা ও গভীর নলকূপে পানি সরবরাহ করে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আপনি কি দেখেন না, আল্লাহ আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেন, অতঃপর তা ভূমিতে ঝরনা হিসেবে প্রবাহিত করেন এবং তা দিয়ে বিভিন্ন বর্ণের ফসল উৎপন্ন করেন, তা শুকিয়ে গেলে তোমরা তা হলদে বর্ণের দেখতে পাও, অতঃপর তিনি তা খড়-কুটায় পরিণত করেন, এতে অবশ্যই বুদ্ধিমানদের জন্য উপদেশ রয়েছে।’ (সুরা : জুমার, আয়াত : ২১)
পানির সরবরাহ নিশ্চিত করা : নদ-নদী ও খাল-বিলের পানির ভোগের অধিকার সব মানুষের রয়েছে। তাই এসবের প্রবাহ ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা সবার কর্তব্য। এ ক্ষেত্রে দূষণ ও শোষণমুক্ত খাল ও নদীর সুরক্ষায় সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বশীলদের পাশাপাশি সবার ভূমিকা পালন করতে হবে। তাই রাসুল (সা.) (সাধারণ ক্ষেত্রে) আগুন ও পানিকে সবার জন্য উন্মুক্ত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মুসলিমরা তিনটি বিষয়ে পরস্পরের অংশীদার। পানি, ঘাস ও আগুন। (বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য না থাকলে) প্রবহমান পানির মূল্য হারাম বলে গণ্য হবে। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৪৭২)
নদ-নদী দখলের কঠিন পরিণাম : সাধারণত ব্যক্তিমালিকানাধীন পুকুরের পানির ব্যবহার সীমিত পর্যায়ে থাকে। তবে খাল-বিল ও নদ-নদীর পানির ব্যবহার সবার জন্য উন্মুক্ত। দখলদারি ও নানা রকম দূষণের মাধ্যমে খাল ও নদীর দখল জঘন্যতম পাপ। সায়িদ বিন জায়েদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি অন্যের এক বিঘত জমি জোরপূর্বক অন্যায়ভাবে দখল করবে, কিয়ামতের দিন সাত স্তর জমি থেকে ওই জমিটুকু তার গলায় বেড়ি হিসেবে পরিয়ে দেওয়া হবে। (বুখারি, হাদিস : ৩১৯৫)
জমি দখলের কঠিন গুনাহর পাশাপাশি প্রবহমান পানি থেকে অন্যদের বঞ্চিত করার কঠিন পাপেরও ভাগীদার হবে তারা। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তিন শ্রেণির ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলবেন না। তিনি তাদের দিকে (করুণার দৃষ্টিতে) তাকাবেন না এবং তাদের পাপ মোচন করবেন না। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। এক ব্যক্তি হলো, যার কাছে (প্রয়োজনের) অতিরিক্ত পানি রয়েছে, কিন্তু সে মুসাফিরকে তা থেকে বঞ্চিত রাখে। অন্য ব্যক্তি হলো, যে কারো আনুগত্যের শপথ করে এবং সে একমাত্র পার্থিব স্বার্থের জন্য তা করে। ফলে তার উদ্দেশ্য পূরণ হলে সে অনুগত থাকে এবং উদ্দেশ্য পূরণ না হলে সে অনুগত থাকে না। আরেক ব্যক্তি হলো, যে আছরের পর (সন্ধ্যাবেলা) পণ্য নিয়ে দরদাম করে এবং আল্লাহর নামে মিথ্যা শপথ করে বলে, সে এত দাম দিয়ে তা ক্রয় করেছে এবং তা শুনে ক্রেতা তা কিনে নেয়। (বুখারি, হাদিস : ৭২১২; মুসলিম, হাদিস : ১০৮)
পানি মানুষের ন্যায্য অধিকার : হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি অতিরিক্ত পানি অন্যদের প্রয়োজনের সময় দেয় না, তাদের কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা বলবেন, আজ আমার অনুগ্রহ থেকে তোমাকে বঞ্চিত করব, যেভাবে তুমি তোমার অতিরিক্ত জিনিস থেকে অন্যদের বঞ্চিত করেছিলে। (বুখারি, হাদিস : ২৩৬৯)
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে আমল করার তাওফিক দিন।