ডিজিটাল ডিভাইস অ্যান্ড ইনোভেশন এক্সপো শুরু
‘মেক হেয়ার, সেল এভরিহোয়ার’ স্লোগানে ১ এপ্রিল থেকে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভে শুরু হলো তিন দিনের ডিজিটাল ডিভাইস অ্যান্ড ইনোভেশন এক্সপো ২০২১। যৌথভাবে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে বাংলাদেশ সরকারের তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি বিভাগ, বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক অথোরিটি (বিএইচটিপিএ), আইডিয়া প্রজেক্ট, এটুআই, স্টার্টআপ বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেড এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস)।
বৃহস্পতিবার সকালে বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ অডিটরিয়ামে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।
রাষ্ট্রপতি বলেন, দেশ এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের চূড়ান্ত পর্যায়ে। ডিজিটাল ডিভাইস অ্যান্ড ইনোভেশন এক্সপোর আয়োজন ডিজিটাল ডিভাইস অ্যান্ড ইনোভেশনের কাজে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার চিত্রটি সকলের কাছে তুলে ধরবে।
আবদুল হামিদ আরও বলেন, এবারের প্রদর্শনীর প্রতিপাদ্য বিষয়টি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এই প্রতিপাদ্যের মধ্যে নিহিত রয়েছে ডিজিটাল পণ্য উৎপাদনের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন ও উদ্ভাবনী জাতি হিসেবে নিজেদের পরিচিতি লাভ করা।
বিসিএস সভাপতি মো. শাহিদ-উল-মুনীরের পক্ষে স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনটির মহাসচিব মুহাম্মদ মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিকাশে বিসিএস ১৯৮৭ সাল থেকে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছে। স্বাধীনতার ৫০ বছরপূর্তি ও মুজিব শতবর্ষে এবং বিসিএস-এর ৩৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে এই এক্সপো স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তব্যে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে এবারের এক্সপো ভার্চুয়ালি আয়োজন করা হয়েছে। এতে যুক্ত হচ্ছেন দেশি-বিদেশি গবেষক, উদ্যোক্তা, উদ্ভাবকরা। আপনাদের সকলের অনপ্রেরণা ও উৎসাহে এবং অবদানের ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ।
তিনি আরও বলেন, আজকের এই ডিজিটাল ডিভাইস অ্যান্ড ইনোভেশন এক্সপো দেশীয় হার্ডওয়্যার শিল্প বিকাশে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। আমাদের তরুণ উদ্ভাবক ও উদ্যোক্তাদের উদ্ভাবন ও আবিষ্কারকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যই এই এক্সপোর আয়োজন।
স্টার্টআপ বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা টিনা এফ জাবিন বলেন, দেশের তরুণ স্টার্টআপদের উন্নয়নে সম্প্রতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড। স্টার্টআপদের উন্নয়ন ও অর্থায়নে কাজ করছে এই প্রতিষ্ঠান। আমরা ৫০টি স্টার্টআপকে শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করছি।
আইসিটি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব রিনা পারভিন বলেন, আমি আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে এবারের এক্সপোতে ৪০টি নতুন ইনোভেশন তুলে ধরা হবে। দেশীয় উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করতে ১২টি ইনোভেশন অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হবে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এই এক্সপোর নলেজ পার্টনার হিসেবে কাজ করছে। যে তরুণরা আমাদের আশা-ভরসা, তারাই স্বপ্রণোদিতভাবে এই এক্সপোর অংশ।
বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসনে আরা বেগম, এনডিসি বলেন, করোনা মহামারির মধ্যে এবছর সীমিত পরিসরে এই আয়োজন করা হয়েছে। বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে ২০১৫ সাল থেকে আইসিটি এক্সপো আয়োজন করে আসছে। তিনি আরও বলেন, আইটি ইন্ডাস্ট্রির জনবলের চাহিদার দিক বিবেচনা করে ২০২৫ সালের মধ্যে ৫৫ হাজার এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ১ লাখ তরুণকে প্রশিক্ষণ দেবে। ইতোমধ্যে সারাদেশে ৫টি হাই-টেক পার্ক সম্পূর্ণ প্রস্তুত। এসব পার্কে বিদেশি প্রতিষ্ঠান প্রযুক্তি পণ্য উৎপাদন শুরু করেছে।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এ.কে.এম রহমতুল্লাহ এম.পি বলেন, চতুর্থ শিল্প-বিপ্লব উপযোগী ৫০টি পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে আইসিটি ডিভিশন। এছাড়াও তরুণদের দক্ষতা, কর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন-বিষয়ক অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ‘ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স ফর স্কিলস, এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড এন্টারপ্রেনিওরশিপ’র মাধ্যমে চাকরি প্রত্যাশী বেকার যুব, শিল্পপ্রতিষ্ঠান এবং প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে।
ডিজিটাল ডিভাইস অ্যান্ড ইনোভেশন এক্সপোর প্লাটিনাম স্পন্সর ইভ্যালির প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রাসেল এবং ওয়ালটন ডিজিটেকের চেয়ারম্যান এস এম রেজাউল আলম শামীম অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
এবারের এক্সপো উপভোগ করার জন্য অ্যাপ উন্মুক্ত করা হয়েছে। গুগল প্লে স্টোর ও আইফোনের অ্যাপ স্টোর থেকে DDIExpo 2021 নামের অ্যাপটি বিনামূল্যে ডাউনলোড করে ইন্সটল করে ব্যবহার করা যাবে। এছাড়াও www.ddiexpo.com ওয়েবসাইট ভিজিট করে ভার্চুয়ালি প্রদর্শনী ঘুরে আসা যাবে।
উদ্বোধনী দিনে ৬টি সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে। সেমিনারগুলো হলো -জার্নি অব ফাউন্ডিং ইওর অওন ভেঞ্চার, রোল অব ইঞ্জিনিয়ার্স ইন সাপোর্টিং অ্যান্ড প্রমোটিং মেড ইন বাংলাদেশ, হার্নেসিং দ্য ভেলু অব ডিসরাপটিভ ইনোভেশনস, ফার্স্ট পিলার: ইন্ডাসট্রিয়াল ইনফ্রাসটাকচারস, ব্রিজিং দ্য গ্যাপ বিটুইন ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড একাডেমিয়া এবং সেকেন্ড পিলার: স্কিলড হিউম্যান রিসোর্সেস। অনলাইনে নিবন্ধিত হয়ে এই সেমিনারগুলোতে অংশ নেয়া যাবে।
ডিজিটাল ডিভাইস অ্যান্ড ইনোভেশন এক্সপোর প্লাটিনাম স্পন্সর ইভ্যালি, গোল্ড স্পন্সর হিসেবে রয়েছে আসুস, ইপসন, স্যামসাং, ফেয়ার ইলেক্ট্রোনিক্স ও ওয়ালটন। সিলিভার স্পন্সর হিসেবে রয়েছে হালিমা গ্রুপ, লিও, ওরিক্স বায়োটেক, সনির্যাগস, সিডনি সান এবং টিপি লিংক।
এছাড়াও ইভেন্টের পার্টনার বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল, আইসিটি অধিদপ্তর, কন্ট্রোলার অব সার্টিফাইং অথোরিটি, বেসিস, বাক্কো, ই-ক্যাব, আইএসপিএবি, বিআইজেএফ, টিএমজিবি। গেমিং পার্টনার গিগাবাইট।