ফটো গ্যালারীভিডিও

মিরসরাইয়ে তরমুজে দ্বিগুণ লাভের আশা চাষিদের

সাগরের তীর ঘেঁষে অন্তত ১৭৫ একর জমিতে তরমুজ চাষ * গরমে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় প্রত্যাশিত দাম

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে সাগরের তীর ঘেঁষে অন্তত ১৭৫ একর জমিতে তরমুজ চাষ করা হয়েছে। ফলনও হয়েছে ভালো। এদিকে গরমে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় প্রত্যাশিত দামেই বিক্রি হচ্ছে তরমুজ। ফলে উৎপাদন খরচ তুলে প্রায় দ্বিগুণ লাভের আশা করছেন চাষিরা।

উপজেলার ইছাখালী ইউনিয়নে সাগরের তীর ধরে জেগে ওঠা জমিতে বাণিজ্যিকভাবে তরমুজ চাষ শুরু করেন পার্শ্ববর্তী জেলা নেয়াখালীর সুবর্ণচর এলাকার উদ্যোক্তারা। গত বছর তাদের সাফল্য দেখে উৎসাহী হয়ে তাদের সঙ্গে স্থানীয় জমি মালিক ও কৃষকরা তরমুজ চাষ শুরু করেছেন। একসময় এসব জমি গরু-মহিষ চারণ ও ধান চাষে ব্যবহার হতো বলে জানান স্থানীয়রা। তরমুজ চাষি সবুজ, শাহাবুদ্দিন, শাহ ইমরান, সেকান্তরসহ কয়েকজন জানান, বিগত বছরের ধারাবাহিকতায় ডিসেম্বরে শেষের দিকে ৭০ হেক্টরেরও বেশি জমিতে তরমুজের চারা রোপণ করা হয়। এতে ফলনও হয়েছে ভালো। এখন তরমুজ চাষে জীবিকা নির্বাহ করছেন তারা।

চাষিরা জানান, বছরের প্রথম দিকে সামান্য বৃষ্টিতে তরমুজের কিছু চারা নষ্ট হয়। তবে ফলন ভালো হওয়ায় এবং বাজারে চলতি দাম বজায় থাকলে এই লোকসান পুষে যাবে।

 

প্রতি বিঘা জমিতে শ্রমিক, ওষুধ ও সেচ খরচসহ প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তবে যে ফলন হয়েছে, তাতে প্রতি বিঘা জমি থেকে ২ লক্ষাধিক টাকার তরমুজ বিক্রি করা যাবে বলে আশা করছেন তারা।

তরমুজ চাষি নুরুন্নবী জানান, এখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় কৃষকরা গাড়ি ভাড়া করে চট্টগ্রাম শহর, ফিরিঙ্গি বাজার, সাতকানিয়া, সীতাকুণ্ড ও ফেনীতে সরাসরি জমি থেকে নিয়ে তরমুজ বিক্রি করছেন।

চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খেতের তরমুজকে ৪টি শ্রেণিতে ভাগ করেছেন কৃষকরা। এতে বড় আকারের তরমুজের দাম রাখছেন শ প্রতি ১২ হাজার টাকা। এতে প্রতিটি তরমুজের বিক্রয় মূল্য দাঁড়ায় ১২০ টাকা। একইভাবে মাঝারি আকারের তরমুজ শ প্রতি ৬ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়। এ ছাড়া ছোট আকারের তরমুজগুলোকে আবার দুটি ভাগে- শ প্রতি ৪ হাজার ও ২ হাজার টাকায় বিক্রি করছেন কৃষকরা।

বর্গা দেওয়া জমির মালিক মোহাম্মদ দাউদ খান জানান, এখানকার মাটি তরমুজ চাষের উপযোগী। পানি সরবরাহের পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও রয়েছে। এ কারণে গত বছরের মতো এবারও মিরসরাইয়ে তরমুজ চাষের উদ্যোগ নিয়েছেন সুবর্ণচরের আশির অধিক উদ্যোক্তা। গত ডিসেম্বরের শেষের দিকে স্থানীয় মালিকদের কাছ থেকে তারা জমি বর্গা নেন। ৩ মাসের জন্য একর প্রতি বর্গা ১৫ হাজার টাকা। এ বছর তরমুজের আশানুরূপ ফলন হয়েছে।

 

উপজেলার ইছাখালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নুরুল মোস্তফা বলেন, মিরসরাইয়ে এবার গত বছরের চেয়ে বেশি জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। সুবর্ণচর এলাকার চাষিদের দেখাদেখি এখানকার কৃষকরাও তরমুজ চাষ করেছেন। তবে অভিজ্ঞতা না থাকা ও খরচ বেশি হওয়ায় তরমুজ চাষে এখানাকার কৃষকরা তেমন আগ্রহ প্রকাশ করেন না।

ইছাখালী ইউনিয়নের দায়িত্বরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির চৌধুরী বলেন, সুবর্ণচর এলাকার আশির অধিক উদ্যোক্তা ৭০ হেক্টরের বেশি জমিতে তরমুজ চাষ করেছে। তাদের সঙ্গে স্থানীয় কৃষকরা যুক্ত হয়েছেন। তরমুজের ফলন ভালো হয়েছে।

মিরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, বছরের প্রথমদিকে বৃষ্টি কিছুটা চিন্তার কারণ ছিল। তবে সে চিন্তা কেটে গেছে। তরমুজের ভালো ফলন হয়েছে। কৃষি অফিস থেকে আগ্রহী স্থানীয় কৃষকদের বারো মাসি তরমুজ চাষের একটি প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হবে।

 

এমন আরও সংবাদ

Back to top button