দেশজুড়েলিড নিউজ

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ও তার মায়ের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় মামলা, কবিরাজ আটক

মা তাহমিনা বেগম ও মেয়ে সুমাইয়া আফরিন

নিজস্ব প্রতিবেদক:কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আফরিন ও তার মা তাহমিনা বেগমকে হত্যার ঘটনায় একজনকে আটক করেছে র‍্যাব। র‍্যাবের ভাষ্য, সন্দেহভাজন হিসেবে আটক হওয়া ওই ব্যক্তি একজন কবিরাজ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। এ ঘটনায় মামলা করা হয়েছে।

সোমবার বিকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র‍্যাব-১১ সিপিসি-২ কুমিল্লার কোম্পানি অধিনায়ক মেজর সাদমান ইবনে আলম। আটক আবদুর রব (৭৩) নাঙ্গলকোট উপজেলার বাসিন্দা। এর আগে দুপুরে তাকে নাঙ্গলকোট থেকে আটক করা হয়।

মেজর সাদমান ইবনে আলম বলেন, ‘সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নাঙ্গলকোট উপজেলা এলাকা থেকে আবদুর রব নামের ওই ব্যক্তিকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে আবদুর রবের সঙ্গেই সর্বশেষ কথা হয়েছে নিহত ব্যক্তিদের। ওই বাসায় তার যাওয়া-আসা ছিল। আবদুর রব ঝাড়ফুঁক (কবিরাজ) করতেন।’

ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, ঘটনার পর ভবনের নিচতলায় থাকা একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সিসিটিভি ফুটেজে মাথায় টুপি, পাঞ্জাবি-পায়জামা পরা এক অজ্ঞাত ব্যক্তিকে সন্দেহজনকভাবে সুমাইয়াদের বাসায় যাতায়াত করতে দেখা গেছে। তাকে একাধিকবার আসা-যাওয়া করতে দেখা যায়। আটক আবদুর রবই সেই ব্যক্তি কিনা জানতে চাইলে মেজর সাদমান ইবনে আলম বলেন, ‘আমাদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্ত চলছে। পুরো কার্যক্রম শেষে আমরাই সবকিছু জানাবো।’

সোমবার সকাল ৭টার দিকে নগরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কালিয়াজুরী এলাকার পিটিআই মাঠসংলগ্ন নেলী কটেজ নামের একটি ভবনের দ্বিতীয় তলা থেকে মা ও মেয়ের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তারা হলেন, কুমিল্লা নগরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের সুজানগর এলাকার প্রয়াত নুরুল ইসলামের স্ত্রী তাহমিনা বেগম (৫২) ও তার মেয়ে সুমাইয়া আফরিন (২৩)। নুরুল ইসলাম কুমিল্লা আদালতের কর্মকর্তা ছিলেন। গত বছরের ১৯ অক্টোবর মারা যান। এই ভাড়া বাসায় প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে থাকছেন তারা। সুমাইয়া আফরিন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তাহমিনা বেগমের দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে বড় ছেলে মো. তাজুল ইসলাম ওরফে ফয়সাল আইনজীবী, তিনি ঢাকায় থাকেন। ছোট ছেলে সাইফুল ইসলাম ওরফে আল-আমিন কুমিল্লা ইপিজেডে চাকরি করেন। সাইফুল রবিবার ছিলেন ঢাকায়। ঢাকা থেকে রবিবার রাতে কাছাকাছি সময়ে দুই ভাই কুমিল্লায় ফেরেন। প্রথমে রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে বাসায় প্রবেশ করেন বড় ছেলে তাজুল ও এর কিছুক্ষণ পরেই বাসায় আসেন ছোট ছেলে সাইফুল।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানা প্রাঙ্গণে নিহত তাহমিনা বেগমের বড় ছেলে মো. তাজুল ইসলাম ফয়সাল জানান, মাকে নিয়ে আজ সকালে আদালতে যাওয়ার কথা ছিল। এজন্য ঢাকা থেকে রবিবার রাতে কুমিল্লায় আসেন তিনি। রাত ১০টা ৪৫ মিনিটের দিকে বাসায় এসে দেখেন দরজা খোলা। একটা টুল দিয়ে দরজা মিলিয়ে রাখা হয়েছে। ভেতরে প্রবেশ করে দেখেন লাইট বন্ধ, প্রথম ভেবেছিলেন মা ও বোন ঘুমাচ্ছেন। লাইট অন করে রাতের খাবার দেওয়ার জন্য মা ও বোনকে ডাকাডাকি করে কোনও সাড়াশব্দ পাননি। কিছুক্ষণ পরে বোনের কক্ষে গিয়ে দেখেন তার দেহ পড়ে রয়েছে খাটের ওপর, হাত ধরতেই দেখেন, শক্ত হয়ে রয়েছে। এরপর পাশের কক্ষে গিয়ে মায়ের নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখেন। এরই মধ্যে ছোট ভাইও ঢাকা থেকে বাসায় এসে পৌঁছায়। পরে তিনি ৯৯৯-এ ফোন করেন।

তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা জানি না কে বা কারা আমার মা ও বোনকে এভাবে হত্যা করেছে। আমার কাছে অবস্থা দেখে মনে হয়েছে পুরো ঘটনাটি পরিকল্পিত, শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। কারণ, ঘর থেকে তেমন কোনও মালামাল খোয়া যায়নি। আমাদের বাড়ির কাজ চলমান থাকায় নানার এলাকায় ভাড়া থাকছি আমরা। আমাদের তেমন কোনও শত্রুও ছিল না। কিন্তু বুঝতে পারছি না কারা এভাবে আমাদের নিঃস্ব করলো।’

এলাকাবাসী ও পুলিশ জানায়, কালিয়াজুরীর ওই ভবনের নিচতলায় ‘হাতেখড়ি আনন্দ পাঠশালা’ নামে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। ভবনের নিচতলায় থাকা ওই প্রতিষ্ঠানের সিসিটিভি ফুটেজে মাথায় টুপি, পাঞ্জাবি-পাজামা পরা এক ব্যক্তির সন্দেহজনক যাতায়াত ধরা পড়েছে। ফুটেজে দেখা গেছে, রবিবার সকাল ৮টার দিকে এক ব্যক্তি নেলী কটেজে প্রবেশ করেন। বেলা ১১টার দিকে তাকে বাসা থেকে বের হতে দেখা যায়। এর কিছুক্ষণ পর বেলা সাড়ে ১১টায় আবারও ওই ভবনে ঢোকেন তিনি। বেলা দেড়টা পর্যন্ত বাসা থেকে তার বের হওয়ার কোনও দৃশ্য পাওয়া যায়নি ফুটেছে। প্রতিদিন দুপুরে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটির পর সিসি ক্যামেরা বন্ধ করে রাখা হয়। এ জন্য পরবর্তী সময়ে ওই ব্যক্তি কখন বের হয়েছেন, সেটি নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আবদুল হাকিম জানান, ঘটনার বিষয়ে খোঁজখবর রাখছেন তারা।

কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মহিনুল ইসলাম বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্তে মনে হচ্ছে এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তবে কীভাবে তাদের হত্যা করা হয়েছে, সেটি নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। অবস্থা দেখে ধারণা করা হচ্ছে, তাদের শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। নিহত দুজনের শরীরে তেমন কোনও আঘাতের চিহ্ন নেই। মেয়েটির গলায় একটি দাগ দেখা গেছে। আর মায়ের একটি চোখ রক্তাক্ত ছিল। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা হচ্ছে। সন্দেহজনক ব্যক্তিটির বিষয়েও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’

এ ঘটনায় বিকালে কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করা হয়েছে। নিহতের ছেলে সাইফুল ইসলাম আল-আমিন মামলাটি করেছেন। এজাহারে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করা হয়।

এ নিয়ে ওসি মো. মহিনুল ইসলাম বলেন, ‘বিকালে মামলাটি করা হয়েছে। আমরা পুরো ঘটনার তদন্ত শুরু করেছি। তদন্তের স্বার্থে এখন বিস্তারিত কিছু বলা যাচ্ছে না।’

এমন আরও সংবাদ

Back to top button