অর্থনীতিএক্সক্লুসিভ নিউজজাতীয়জীবনযাত্রালিড নিউজ

নিম্নমুখী চালের বাজার, সস্তির মুখ দেখছে ক্রেতারা

নিম্নমুখী চালের বাজার, সস্তির মুখ দেখছে ক্রেতারাঢাকা: গেল এক মাসে চালের বাজার কিছুটা নিম্নমুখী। প্রকারভেদে কেজিতে চালের দাম কমেছে ১ থেকে ২ টাকা। তবে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে বাজারে এখনো চালের দাম বেশি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চালের আমদানিতে ধীর গতি থাকায় দাম উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমছে না।

মঙ্গলবার (৭ সেপ্টেম্বর) কাওরান বাজারের খুচরা বাজারে মিনিকেট ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, আটাশ ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, নাজির ৬৫ থেকে ৭০ টাকা ও স্বর্ণা ৪৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। তবে আগস্টের শেষ দিকে খুচরা বাজারে মিনিকেট ৬২ থেকে ৬৫, আটাশ ৫০ থেকে ৫৫, স্বর্ণা ৫০ ও নাজিরশাইল ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল।

কাওরান বাজারের মায়ের দোয়া স্টোরের কর্মচারী বাবলু বলেন, গেল ১০ দিনে বস্তাপ্রতি চালের দাম ২০ থেকে ৫০ টাকা কমেছে। সে হিসাবে প্রকারভেদে চালের কেজি ১ থেকে ২ টাকা কমেছে। বর্তমানে বাজার খুব বেশি না হলেও কিছুটা নিম্নমুখী।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, বর্তমানে সরু চাল ৫৫ থেকে ৬৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগে দাম ছিল ৬০ থেকে ৬৮ টাকা, যা এক মাস আগেও একই ছিল। অর্থাৎ মাস ব্যবধানে এ ধরনের চালের দাম কমেছে ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ। তবে আগের বছর একই সময়ে এ ধরনের চালের দাম ছিল ৫৪ থেকে ৬৪ টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে চালের দাম এখনো ১ দশমিক ৬৯ শতাংশ বেশি।

এছাড়া মাঝারি মানের চালের দাম ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগেও এই চালের দাম একই ছিল। এক মাস আগে এ ধরনের চালের কেজি ছিল ৫০ থেকে ৫৬ টাকা। অর্থাৎ এক মাসে এ ধরনের চালের দাম কমেছে ১ শতাংশের মতো। তবে গেল বছরের একই সময়ে এই চালের দাম ছিল প্রতি কেজি ৪৮ থেকে ৫৪ টাকা। বাজারে বর্তমানে এ ধরনের চালের দাম কমলেও গত বছরের এই সময়ের তুলনায় তা ২ দশমিক ৯৪ শতাংশ বেশি।

টিসিবির তথ্যমতে, মোটা চাল বর্তমানে ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে বাজারে। এক সপ্তাহ আগে দাম ছিল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। আর এক মাস আগে দাম ছিল ৪৬ থেকে ৫২ টাকা। সে হিসাবে মাসের ব্যবধানে এ ধরনের চালের দাম কমেছে ৫ শতাংশের বেশি। তবে আগের বছরের এই সময়ে এই চালের দাম ছিল ৪২ থেকে ৪৮ টাকা। ফলে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এ বছর দাম বেশি রয়ছে ৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ বেশি।

জানতে চাইলে কাওরান বাজারের মেসার্স হাজী ইসমাইল অ্যান্ড সন্সের মালিক জসিম উদ্দিন বলেন, চালের বাজার আগের মতোই আছে। ভারতীয় চাল আসছে— এমন খবর প্রচারের পর দাম কিছুটা কমেছিল। পরে আবার দাম বেড়ে গেছে। ফলে বাজারে চালের দাম এক মাস আগের প্রায় সমানই রয়ে গেছে।
জানতে চাইলে নওগাঁ ধান-চাল আড়তদার সমিতির সভাপতি নিরোধ চন্দ্র সাহা বলেন, চালের বাজার আগের মতোই স্থিতিশীল আছে। নতুন করে চালের দাম আর তেমন কমেনি। তবে চাল আমদানি হচ্ছে বলে সবাই এখন সীমান্তমুখী। আমাদের এখানে ক্রেতা নেই।

তিনি আরও বলেন, ভারত থেকে চাল আসতে সময় লাগছে। ভারতীয় গাড়ি ঢুকতে ২০ থেকে ২৭ দিন লাগছে। ফলে চালের আমদানিতে খুবই ধীর গতি দেখা যাচ্ছে। বেশি করে চাল এলে হয়তো দাম আরও কমত।

এদিকে, দেশে চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকার চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া ছাড়াও আমদানি শুল্কও কমিয়েছে। গত আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ এক প্রজ্ঞাপনে জানায়, আগে চাল আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হলেও এখন সেটি দিতে হবে ১৫ শতাংশ হারে। অর্থাৎ আগের চেয়ে ১০ শতাংশ কম শুল্কে সিদ্ধ ও আতপ চাল আমদানি করা হচ্ছে।

এদিকে, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সরকারি বর্তমানে খাদ্যের মজুত বেড়েছে। মাসখানেক আগে খাদ্যের মজুত ১৬ কোটি ৬৯ লাখ টন থাকলেও বর্তমানে দেশে খাদ্যশস্যের সরকারি মজুদ রয়েছে ১৮ কোটি ২৭ লাখ টন। এর মধ্যে চাল ১৬ কোটি ২ লাখ টন, গম ১ কোটি ৬৬ লাখ টন ও ধান ৯১ লাখ টন।

জানতে চাইলে খাদ্য সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম বলেন, চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। শুল্ক কমিয়ে ভারত থেকে চাল আমদানি করা হচ্ছে। ওএমএস-এর মাধ্যমে চাল দেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে মোটা চালের দাম কমে গেছে। কিন্তু মানুষ মোটা চাল কম খায় এখন। তবে আউশ ধান বাজারে উঠতে শুরু করেছে। আমরা আশাবাদী, দ্রুতই চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে।

এমন আরও সংবাদ

Back to top button