এক্সক্লুসিভ নিউজ : ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবণ্টিত বা অদাবিকৃত মুনাফা শেয়ারবাজার স্থিতিশীলকরণ তহবিলে জমা করা যাবে না। কারণ, তা ব্যাংক কোম্পানি আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ইতিমধ্যে যেসব ব্যাংক অবণ্টিত মুনাফা এ তহবিলে জমা করেছে, তাদের তা ফেরত দিতে হবে। সেই মুনাফা জমা নিতে কমিউনিটি ব্যাংকের গুলশান শাখায় হিসাব খুলেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
গতকাল সোমবার নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সমন্বয় সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। সভায় বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএসইসি, যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মগুলোর নিবন্ধকের পরিদপ্তর (আরজেএসসি), বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ), বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি), ক্ষুদ্রঋণ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (এমআরএ) এবং সমবায় অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অনলাইন প্ল্যাটফর্মে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
সমন্বয় সভায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, বিএসইসির কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ, বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার উপস্থিত ছিলেন। করোনার কারণে দীর্ঘদিন পর নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
জানা গেছে, সম্প্রতি শেয়ারবাজার নিয়ে বিএসইসির কিছু সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ ব্যাংক আপত্তি তোলে। এ জন্য তদারকি বাড়ানোসহ ব্যাংকগুলোর শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ খতিয়ে দেখতে বিশেষ পরিদর্শন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। জরিমানা করে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংককে। এমন পরিস্থিতিতে প্রতিক্রিয়া দেখায় বিএসইসি। শেয়ারবাজারে ঋণসুবিধা বাড়িয়ে দেয়। আগে সূচক ৭ হাজার পর্যন্ত থাকলে মার্জিন ঋণ ১০০ টাকায় ৮০ টাকা ছিল। তা বাড়িয়ে সূচক আট হাজার পর্যন্ত করে বিএসইসি। এমন পরিস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয় নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সভা, যেখানে বিএসইসি ও বাংলাদেশ ব্যাংক অংশ নেয়।
নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর এ সভায় শেয়ারবাজার নিয়ে মোটাদাগে তিন ধরনের সিদ্ধান্ত হয়। প্রথমত, অবণ্টিত মুনাফা শেয়ারবাজার স্থিতিশীলকরণ তহবিলে জমা না দেওয়া। দ্বিতীয়ত, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান পুঞ্জীভূত লোকসানে থাকলে মুনাফা দিতে পারবে না, যদিও চলতি বছরে মুনাফা করে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, লোকসানে থেকে মুনাফা দেওয়ার সিদ্ধান্ত ব্যাংক কোম্পানি আইন ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক হিসাবরীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। সম্প্রতি বিএসইসি নির্দেশনা দিয়েছে, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি চলতি বছরে মুনাফা করলেই মুনাফা দিতে পারবে।
তৃতীয় সিদ্ধান্ত হলো ব্যাংক কোম্পানি আইন মেনে বাংলাদেশ ব্যাংক যে সিদ্ধান্ত দেবে, তা পরিপালনে যেন বিএসইসির কোনো বিধি বাধা হয়ে না দাঁড়ায়। সম্প্রতি ওয়ান ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদন নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আপত্তি তুলেছে। তবে বিধির কারণে ব্যাংকটি নতুন করে আর্থিক প্রতিবেদন করছে না।
জানতে চাইলে বিএসইসির কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর মধ্যে নিয়মিত সমন্বয় সভা হয়। বিনিয়োগ ও আমানতকারী উভয়ের স্বার্থে আমরা এক হয়ে কাজ করছি।’
গতকালের সভায় জানানো হয়, সামাজিক মাধ্যম ও ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে যাতে অর্থ পাচার না হয়, সে ব্যাপারে বিটিআরসি নজরদারি করবে। এ ছাড়া বিমা কোম্পানির পরিচালকদের তথ্য–উপাত্ত সংরক্ষণে ডেটা ব্যাংক গঠন করবে আইডিআরএ।