১ গ্রামে ৪শ’ বাড়িতে বিভিন্ন নার্সারি
যশোর ব্যুরো : মোশাররফ গাজী নিজের নার্সারিতে গাছের চারার পরিচর্যা করছেন। সম্প্রতি যশোরের মনিরামপুর উপজেলার বাসুদেবপুর গ্রামে।
মোশাররফ গাজী নিজের নার্সারিতে গাছের চারার পরিচর্যা করছেন। সম্প্রতি যশোরের মনিরামপুর উপজেলার বাসুদেবপুর গ্রামে।ছবি: এহসান-উদ-দৌলা
পঞ্চাশ বছর আগে গ্রামটিতে নার্সারি ব্যবসার শুরু করেছিলেন মোহাম্মদ আলী (৬৬) ও তাঁর বাবা সৈয়দ ওলিয়ার রহমান। গ্রামটিতে এখন কয়েক শ নার্সারি। নার্সারির ব্যবসা করেই কোটপতি হয়েছেন কয়েকজন। প্রতিদিন প্রায় ২০ হাজার চারাগাছ বিক্রি হয় এই গ্রাম থেকেই।
গ্রামটিতে ধান, পাট, রবিশস্যের চাষ তেমন হয় না। যেদিকে চোখ যায়, শুধু ফলদ আর বনজ গাছের চারা। দূরদূরান্ত থেকে লোকজন আসেন বাসুদেবপুর গ্রামের চারা কিনতে। গ্রামটি যশোরের মনিরামপুর উপজেলায়।
গোড়ার কথা : তখনো দেশ স্বাধীন হয়নি। বাবার সঙ্গে লিচুর চারা ঝিকরগাছা বাজারে নিয়ে দুই আনায় বেচতেন কিশোর মোহাম্মদ আলী। সে সময় বরিশাল থেকে নৌকায় করে আমড়া, তেজপাতা ও পেয়ারার চারা আসত ঝিকরগাছায়। বেচাকেনা করতে গিয়ে মোহাম্মদ আলী চারা তৈরির কৌশল শিখে নেন। এরপর থেকে তিনি নিজেই বাসুদেবপুর বাজারে চারা নিয়ে বসতেন। পরে মোহাম্মদ আলীর কাছ থেকে অনেকে চারা তৈরির কৌশল শেখেন। ধীরে ধীরে ব্যবসার প্রসার ঘটতে থাকে।
বাসুদেবপুর গ্রামটি যশোর শহর থেকে দক্ষিণে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে মনিরামপুর উপজেলায় অবস্থিত। গ্রামে ৫০০ পরিবারের বাস। এর মধ্যে ৪০০ বাড়িতেই নার্সারি আছে। তবে গ্রামে প্রাতিষ্ঠানিক নার্সারি আছে ১০০টি। সম্প্রতি গ্রামটি ঘুরে দেখা গেছে, ফসলের মাঠে ধান, পাট নেই বললেই চলে। মাঠে মাঠে চারা বিক্রির ছোট ছোট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ব্যবসায়ীরা মাঠ থেকেই চারা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। বাসুদেবপুর গ্রামের বাজারটি ছোট, কিন্তু এ বাজারেই দোকান আছে ২০০টি। এর অর্ধেকের বেশি চারা বিক্রির দোকান।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, গ্রামটিতে অন্তত ৫০০টি পরিবারের বাস। গ্রামের ৮০ ভাগ মানুষের আয়ের উৎস গাছের চারা তৈরি করে বিক্রি করা। এই গ্রামে চারা তৈরির বিপ্লব দেখে পাশের চন্দ্রপুর, পলাশী ও বাগডোব গ্রামেও চারা তৈরিতে অন্তত ৫০ জন এগিয়ে এসেছেন।
চাকরি ছেড়ে উদ্যোক্তা : বাসুদেবপুর বাজারের শুরুতেই এনামুল হকের একতলা বাড়ি। বাড়ির সঙ্গেই তিনি প্রায় এক একর জমিতে নার্সারি গড়ে তুলেছেন। বাড়িতে বসেই নারকেল, সুপারির চারা বিক্রি করতে দেখা গেল তাঁকে।
এনামুল হক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে হিসাববিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাস করেছিলেন। ঢাকায় ভালো বেতনে চাকরি করতেন। করোনা পরিস্থিতিতে চাকরি ছেড়ে বাড়ি ফিরে বছরখানেক আগে নার্সারির কাজ শুরু করেন।
শুরুর উদ্যোক্তার কথা : মোহাম্মদ আলীর খোঁজ করতে করতে বাজারের ‘পুরাতন নার্সারি’তে গিয়ে তাঁকে পাওয়া গেল। এটি তাঁরই চারা বিক্রয়কেন্দ্র। গ্রামের সবার কাছে পুরোনো উদ্যোক্তা বলেই পরিচিত। তাই তিনি তাঁর নার্সারির নাম রেখেছেন ‘পুরাতন’।
ভরদুপুরে মোহাম্মদ আলীর নার্সারিতে গিয়ে দেখা গেল, চারা বিক্রির হিড়িক পড়েছে তাঁর দোকানে। চারা বিক্রির হিসাবনিকাশ খাতায় তুলে রাখছেন তিনি। ব্যস্ততার মধ্যেও কথা হলো তাঁর সঙ্গে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, বাসুদেবপুর গ্রামের নার্সারি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের মধ্যে কারও যদি কৃষিঋণ প্রয়োজন হয়, তাহলে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের তালিকা প্রস্তুত করে জেলা ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কাছে উপস্থাপন করলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।