ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের আবাসন ভোগান্তির শেষ কোথায়
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
প্রতিনিধি, রাজশাহী : বছরের পর বছর ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের। প্রতি বছর আবাসন সমস্যা থাকলেও তেমন নজর দেয় না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পরীক্ষা দিতে এসে থাকতে হয় রিডিং রুম, পেপার রুম, মসজিদসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরেই বিভিন্ন স্থানে। তবে করোনার কারণে এবার সেই সুযোগও নেই। তাই অন্যবারের চেয়ে এবার ভোগান্তি অনেক বেশি। অন্যদিকে রাজশাহীর মেসগুলোতে অভিভাবকদের থাকার সুযোগ নেই। ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের সমস্যা আরও বেশি। তাই বাধ্য হয়ে অনেকে পরীক্ষা দিতেই যান না।
এক-দুদিন থাকার জন্য পাওয়া যায় না হোটেল রুমও। অনেক পরীক্ষার্থী অথবা তার স্বজনদের একটি রুমের জন্য হন্যে হয়ে খুঁজতে দেখা যায়। এমনই একজন মো. রাফি। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে যখন হোটেল ডালাস ইন্টারন্যাশনালে যান, তখন সেখানকার ব্যবস্থাপক মো. আলমগীরও জানিয়ে দেন যে, রুম খালি নেই। রাফি হাঁটলেন আরেকটি হোটেলের দিকে। এভাবে থাকার জায়গা খুঁজতে এক-দুটি নয়, সাতটি আবাসিক হোটেলে গিয়েছেন তিনি। কোনোটিতেই কক্ষ খালি পাননি।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভর্তি পরীক্ষার জন্য আগামী ৩ থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত হোটেলে এমনই সিট সংকট দেখা দিয়েছে। একটি হোটেল কক্ষও যেন সোনার হরিণ। হোটেল কর্তৃপক্ষ বলছে, সপ্তাহখানেক আগেই বুকিং দেওয়া শেষ।
আবাসিক হোটেল মালিক সমিতি রাজশাহী মহানগরের সভাপতি খন্দকার হাসান কবির বলেন, রাজশাহী শহরে ছোট-বড় মিলিয়ে আবাসিক হোটেলের সংখ্যা ৬০ থেকে ৬৫ টি। এতে ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার মানুষকে রাখা সম্ভব।
নগরীর সাহেববাজার এলাকায় খন্দকার হাসান কবিরের হোটেলের নাম নাইস ইন্টারন্যাশনাল। হোটেলটির ব্যবস্থাপক হীরাঙ্গীর মোল্লা বলেন, ‘আমাদের রুমগুলো সব এসি। তাই চাহিদাও বেশি। দুসপ্তাহ আগেই বুকিং শেষ। প্রতিদিন অন্তত ১০০ ফোন রিসিভ করছি, সবাই রুমের জন্য ফোন করছেন। আমরা দিতে পারছি না। অনেকে সশরীরে আসছেন রুম খুঁজতে। তাঁদেরও ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে।’
নগরীর রেলগেট এলাকার হোটেল গুলশানের ব্যবস্থাপক ফরিদ আহমেদ জানালেন, তাঁদের হোটেলে সব শ্রেণির কক্ষ মিলিয়ে ৭২ জনকে রাখার ব্যবস্থা আছে। এক সপ্তাহ আগেই বুকিং শেষ হয়ে গেছে। এখন আর বুকিং নেওয়া সম্ভব নয়। তিনিও প্রতিদিন ৩০-৩৫ জনকে ফিরিয়ে দিচ্ছেন। রাবির ভর্তি পরীক্ষার সময় প্রতিবছরই এমন হয়।
ফরিদ আহমেদ যখন কথা বলছিলেন, তখনই রুমের সন্ধানে আসেন আজমল হোসেন নামের এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ঢাকা ও কিশোরগঞ্জ থেকে তাঁর চারজন স্বজন পরীক্ষা দিতে আসবেন। তাদের জন্যই রুম খুঁজছেন। সকাল থেকে অন্তত ১০টি হোটেল ঘুরেছেন। কোথাও একটিও রুম পাননি। আজমল জানান, শহরে তিনি মেসে ভাড়া থাকেন। এখন পরীক্ষার্থীদের কোথায় রাখবেন, তা নিয়ে পড়েছেন বিড়ম্বনায়।
হোটেল ডালাস ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপক মো. আলমগীর বলেন, এখনো অনেক মেস খোলেনি। আবার মেসে অভিভাবকদেরও থাকার সুযোগ নেই। সে কারণেই রাবির ভর্তি পরীক্ষার সময় প্রতি বছর শিক্ষার্থীদের খুব বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।
আগামী ৪ অক্টোবর রাবিতে ‘সি’ ইউনিটের (বিজ্ঞান) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। পরদিন ৫ অক্টোবর ‘এ’ ইউনিটের পরীক্ষাও তিনটি শিফটে অনুষ্ঠিত হবে। ৬ অক্টোবর হবে ‘বি’ ইউনিটের (বাণিজ্য) পরীক্ষা। সব মিলিয়ে এই সময়ে শহরটিতে আসবেন প্রায় ১ লাখ ৩৫ হাজার শিক্ষার্থী।
এদিকে রাজশাহীতে ছোট-বড় মিলিয়ে মেস আছে প্রায় ৫ হাজার। সেখানে ১ লাখের বেশি শিক্ষার্থী থাকেন। রাজশাহী মহানগর মেস মালিক সভাপতি এনায়েতুর রহমান বলেন, রাবির পরীক্ষা নিয়ে যে সমস্যা, সেটি নিয়ে তাঁরাও ভাবছেন। রাবি উপাচার্য, জেলা প্রশাসক ও নগর পুলিশের কমিশনারের সঙ্গে আলোচনা করে তাঁরা একটা সিদ্ধান্ত নেবেন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) কল্যাণ চৌধুরীও জানিয়েছেন, পরীক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যা নিয়ে তাঁরা ভাবছেন।