আন্তর্জাতিক ডেস্ক : শ্রীলঙ্কায় সহিংসতা চলছেই। সর্বশেষ পাওয়া খবরে জানা গেছে, দেশটিতে চলমান সহিংসতায় ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছে শতাধিক। এরই মধ্যে দেশটির শাসক পরিবার রাজাপক্ষের পূর্বসূরিদের গ্রামের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও তা ধ্বংসস্তূপে পরিণত করার তথ্য পাওয়া গেছে। গতকাল সোমবারই মাহিন্দা ও গোতাবায়া রাজাপক্ষের বাবা–মায়ের স্মৃতিস্তম্ভ গুঁড়িয়ে দেওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছিল।
বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়েছে, আহতের সংখ্যা দুই শরও বেশি। এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৪১ জন রাজনীতিকের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে কারফিউও বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। এসব বাড়িঘরের সামনে থাকা শতাধিক মোটরবাইকেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
স্থানীয় এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বিক্ষোভকারী বলেছেন, ‘এই কাজগুলো আরও আগেই করা উচিত ছিল। আরও আগেই আগুন ধরাতে না পেরে আমাদের দুঃখ হচ্ছে।’
বিক্ষোভকারীদের ক্ষোভ থেকে রক্ষা পায়নি শাসক পরিবার রাজাপক্ষেদের ঘরও। তাঁদের পূর্বসূরিরা দক্ষিণ শ্রীলঙ্কার যে গ্রামে থাকতেন, সেখানে বিক্ষোভকারীরা রাজাপক্ষের বাবা–মায়ের স্মৃতিস্তম্ভ গুঁড়িয়ে দিয়েছে। মেদা মুলানা নামের এই গ্রামে থাকা রাজাপক্ষেদের আদি বাড়িতেও হামলা চালানো হয়। শ্রীলঙ্কার উত্তর–পশ্চিমাঞ্চলের কুরুনেগালা শহরে থাকা রাজাপক্ষের রাজনৈতিক কার্যালয় গুঁড়িয়ে দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। এমনকি রাজাপক্ষেদের পারিবারিক ইতিহাস নিয়ে নির্মিত জাদুঘরেও ভাঙচুর চলে।
এর আগে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনেও অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষোভকারীরা। পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করলেও পুরোপুরি সফল হতে পারেনি।
এদিকে ডেইলি মিররের প্রতিবেদনে বলা হয়, আজ মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকাল ৭টায় জননিরাপত্তা অরডিন্যান্সের ১৬ ধারা মেনে জারি করা কারফিউ তুলে নেওয়ার কথা ছিল। পরে তা বাড়িয়ে আগামীকাল বুধবার সকাল ৭টা পর্যন্ত করা হয়েছে। কারফিউ চলাকালে কেউ ঘর থেকে বের হতে পারবেন না। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে বের হওয়া যাবে।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতির কারণে শ্রীলঙ্কা ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে। জ্বালানি, খাদ্য ও ওষুধের মতো প্রয়োজনীয় দ্রব্য সরবরাহে চরম ঘাটতি দেখা দিয়েছে। সরকার ও আইন প্রণেতাদের জরুরি সমাধান খোঁজার আহ্বান জানিয়ে কয়েক দিন ধরে দেশব্যাপী সহিংস বিক্ষোভ চলছে।
তবে গত এপ্রিলের প্রথম থেকে সরকারবিরোধীরা শান্তিপূর্ণভাবেই বিক্ষোভ প্রদর্শন করে আসছিলেন। তবে মাহিন্দা রাজাপক্ষের সমর্থকেরা তাদের ওপর হামলা চালানো শুরু করলে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ সহিংস আকার নেয়। বিক্ষোভের দরুন এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন মাহিন্দা রাজাপক্ষে। এরপরই শাসকদলের নেতা–নেত্রীদের ঘরবাড়িতে হামলার শুরু হয়।