আগরতলায় মুসলিম রেস্টুরেন্ট-দিল্লিকা মসুর চিকেন বিরিয়ানি
ত্রিপুরার রাজধানী শহর আগরতলা বাংলাদেশের সবচেয়ে কাছে অবস্থিত ভারতের ছোট্ট একটি শহর। মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধের আগে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার কারণে বাংলাদেশের মানুষের কাছে খুবই পরিচিত নাম আগরতলা। ট্রেনে আখাউড়া হয়ে খুব সহজে ও কম খরচে পৌঁছানো যায় সেখানে। অনেকেরই ভ্রমণ অভিজ্ঞতা থেকে জেনেছি আগরতলায় কোনো মুসলিম রেস্টুরেন্ট নেই। তাই সেখানে ভ্রমণে গিয়ে খাওয়া নিয়ে হালকা একটু চিন্তা ছিলো।
গত ৬ ডিসেম্বর দুদিনের ভ্রমণে আগরতলা ভ্রমণে গিয়েছি পরিবার নিয়ে। ঢাকা থেকে ট্রেনে করে আখাউড়া হয়ে দুপুর ১২ টার মধ্যেই পৌঁছে যাই আগরতলা। হোটেলে চেকইন করে ফ্রেশ হয়ে বের হয়েছি লাঞ্চ করার জন্য। গুগলে সার্চ করে দেখলাম আগরতলা শহরের শান্তিপাড়া মসজিদ পট্টি নামক জায়গাটি মুসলিম বসতি এলাকা। আমার চিন্তায় এলো সেখানে অবশ্যই কোনো মুসলিম রেস্টুরেন্ট পাওয়া যাবে। একটা ব্যাটারি চালিত অটো ঠিক করে শান্তিপাড়া মসজিদ পট্টি এরিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম।
মসজিদ পট্টিতে গিয়ে কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করলাম মুসলিম রেস্টুরেন্ট কোথায় আছে। সেখানের লোকজন জানালো মেইন রাস্তা ধরে একটু এগুলে মোটর স্ট্যান্ড নামক জায়গায় ‘দিল্লিকা মসুর চিকেন বিরিয়ানি রেস্টুরেন্ট’ আছে। এগিয়ে চললাম মোটর স্ট্যান্ড নামক জায়গার উদ্দেশ্যে। মোটর স্ট্যান্ড পৌঁছেই রাস্তার ডান পাশে রেস্টুরেন্টটি নজরে আসলো। নরমাল একটা রেস্টুরেন্ট, কিন্তু অনেক কাস্টমার। তারা দুপুরে শুধু হায়দারাবাদী বিরিয়ানি ও মুরাদাবাদী বিরিয়ানি বিক্রি করে। আমরা একটা টেবিলে বসে পড়লাম।
আমরা দুরকম বিরিয়ানিই অর্ডার করেছি স্বাদ চেখে দেখার জন্য। বাসমতী চাউল আর চিকেন দিয়ে রান্না করা বিরিয়ানি হাফ ৬০ রূপী আর ফুল ১২০ রূপী। হায়দারাবাদী বিরিয়ানি সাথে মিশিয়ে খাওযার জন্য একটি চাটনী এবং মুরাদাবাদী বিরিয়ানির সাথে মিশিয়ে খাওয়ার জন্য তারা একটা ঝোল দেয়। হায়দারাবাদী বিরিয়ানি সামান্য ঝালযুক্ত, মুরাদাবাদী বিরিয়ানির ঝাল খুবই কম। খুবই সুস্বাদু ছিলো দুরকম বিরিয়ানি। পরিমাণও যথেষ্ট ছিলো। আমার কাছে বেশি ভালো লেগেছে মুরাদাবাদী বিরিয়ানি।
খাওয়ার পরে রেস্টুরেন্টের মালিক ইকবালের সাথে কথা বললাম। ইকবালের বাড়ি ভারতের উত্তর প্রদেশে, হিন্দিতে কথা বলে। আগরতলা থাকতে থাকতে বাংলা বুঝে কিন্তু বলতে পারে না। সে জানালো তার ছোট ভাইয়ের নাম আফজাল এবং আফজালই হলো রেস্টুরেন্টের বাবুর্চী। দুইভাই মিলেই মুলত এই রেস্টুরেন্ট ব্যবসা চালায়। অন্যান্য স্টাফদের মধ্যে তার নিজ এলাকার ও আগরতলার লোকও আছে। তাদের খাবার সুস্বাদু হওয়ায় সব কমিউনিটির লোকজনই এখানে খেতে আসে।
লেখক: ফ্রিল্যান্স কলামিস্ট ও সদস্য-বাংলাদেশ ট্রাভেল রাইটার্স এসোসিয়েশন