কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষার্থী সুমাইয়া আফরিন ও তার মা তাহমিনা বেগমকে হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে মো. মোবারক হোসেন (২৯) নামে এক কবিরাজকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পুলিশ বলেছে, ভুক্তভোগীদের বাসায় ওই কবিরাজের যাতায়াত ছিল। ঝাড়ফুঁক করার সময় তিনি সুমাইয়াকে ধর্ষণের চেষ্টা চালান। মা দেখে ফেলায় প্রথমে তাকে বালিশচাপা দিয়ে এবং পরে সুমাইয়াকে গলা টিপে হত্যা করা হয়।
এদিকে হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটন ও বিচার চেয়ে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) বেলা আড়াইটার দিকে কুমিল্লা পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মাদ নাজির আহমেদ খান গ্রেপ্তারের বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান।
এর আগে গত সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকায় পালিয়ে যাওয়ার সময় কুমিল্লা নগরীর বাগিচাগাঁও এলাকা থেকে মোবারক হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি জেলার দেবিদ্বার উপজেলার কাবিলপুর গ্রামের মৃত আবদুল জলিলের ছেলে।
মোবারক হোসেনকে মূল হত্যাকারী আখ্যায়িত করে এসপি নাজির আহমেদ বলেন, ‘ঝাড়ফুঁক করার সুবাদে মোবারক হোসেন সুমাইয়া আফরিনদের বাসায় যাতায়াত করতেন। রবিবার সকাল সাড়ে ৮টায় সুমাইয়াদের ভাড়া বাসা নগরীর কালিয়াজুড়ী এলাকায় নেলি কটেজ নামক বাসায় প্রবেশ করেন মোবারক। এরই মধ্যে তিনি তাদের বাসায় ঝাড়ফুঁক করে পানি ছিটিয়ে বেরিয়ে যান। আবার বেলা সাড়ে ১১টায় ওই বাড়িতে প্রবেশ করেন, যা সিসিটিভি ক্যামেরায় দেখা গেছে।’
পুলিশ সুপার বলেন, ‘মোবারক তাদের বাসায় থাকাকালীন একপর্যায়ে সুমাইয়া আফরিনকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। এ সময় তার মা বাধা দেন। এতে মোবারক ক্ষুব্ধ হয়ে সুমাইয়াকে একটি রুমে আটকে রাখেন। পরে মা তাহমিনা বেগমকে অন্য একটি রুমে নিয়ে বালিশচাপায় হত্যা করেন। এরপর সুমাইয়াকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। এ সময় সুমাইয়া প্রতিরোধ করলে তাকে গলা টিপে হত্যা করা হয়। হত্যার পর মোবারক সুমাইয়াদের ঘর থেকে চারটি মোবাইল ফোন ও একটি ল্যাপটপ নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যান।’
ধর্ষণ হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, ‘বিষয়টি ময়নাতদন্ত ও ফরেনসিক রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে।’
সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে পুলিশ সুপারের কাছে জানতে চাওয়া হয়, ‘আগের দিন আপনারা একজনকে আটক করে তাকে সন্দেহভাজন হিসেবে বলেছিলেন, আজকে বলছেন মোবারক মূল অভিযুক্ত।’ তখন পুলিশ সুপার বলেন, ‘আগের দিন যাকে আটক করা হয়েছিল তিনিও কবিরাজ। তাকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করা হয়েছিল। আজকে যে মোবারককে গ্রেপ্তার করা হয়েছেন তিনি মূল অভিযুক্ত। সিসিটিভি ফুটেছে তাকেই দেখা গেছে।’
এদিকে মূল অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে পুলিশ সুপার জানালেও তার কার্যালয়ের সামনে গতকাল দিনভর বিক্ষোভ করেছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারা বলেন, ‘আমরা প্রকৃত ঘটনা জানতে চাই। কেন হত্যা করা হলো বিষয়টির সুস্পষ্টতা দরকার। তার আগের দিন আপনারা (পুলিশ) একজনকে গ্রেপ্তারের কথা বলেছেন। আজকে এসে আরেকজনকে গ্রেপ্তারের কথা বলছেন, আমরা প্রকৃত মোটিভ জানতে চাই। পুলিশ সুপারের কাছ থেকে এ বিষয়ে সরাসরি বক্তব্য শুনতে চাই।’
এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে পুলিশ সুপারের কাছে দুবার প্রতিনিধি পাঠালেও বেলা সোয়া ৩টা পর্যন্ত পুলিশ সুপার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি।
নিহত সুমাইয়া আরফিন (২৩) কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ১৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তিনি কুমিল্লা নগরীর সুজানগর এলাকার বাসিন্দা ও কুমিল্লা আদালতের সাবেক হিসাবরক্ষক মৃত নুরুল ইসলামের মেয়ে। তারা গত চার বছর ধরে নগরীর কালিয়াজুড়ী এলাকায় নেলি কটেজের দ্বিতীয় তলায় ভাড়া থাকতেন। সোমবার সকালে ওই বাসা থেকে সুমাইয়া আফরিন ও তার মা তাহমিনা বেগমের লাশ উদ্ধার করা হয়। মা ও বোনের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বড় ভাই ফয়সাল বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেছেন।