ভ্রমণ

প্রকৃতির মায়াজালে মোহাবিষ্ট ‘মহামায়া লেক’

প্রকৃতির মায়াজালে মোহাবিষ্ট ‘মহামায়া লেক’

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে পাহাড়ের কোল ঘেঁষে টলটলে জলরাশির মাঝে অবস্থিত এক মনোরম কৃত্রিম জলাধার—মহামায়া লেক। প্রকৃতি, রোমাঞ্চ এবং প্রশান্তি—এই তিনের অনবদ্য মেলবন্ধন যেন হয়ে উঠেছে এই লেক। ঢাকার কোলাহল, জীবনের জটিলতা কিংবা শহরের ক্লান্তি ভুলে নিঃশ্বাস নিতে চাইলে মহামায়া লেক হতে পারে আপনার পরবর্তী গন্তব্য।

মিরসরাই উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের অন্তর্গত ঠাকুরদিঘী বাজার থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার পূর্বে ১১ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত মহামায়া লেক। ২০১০ সালে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিকল্পনায় নির্মিত এ কৃত্রিম লেক এখন জল সংরক্ষণ ছাড়াও হয়ে উঠেছে অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। পাহাড়ি গুহা, রাবার ড্যাম আর ঝরনার শীতলতা—সব মিলে যেন এক জলছবির মতো স্থান।

এখানে রয়েছে কায়াকিং, নৌকা ভ্রমণ, ঝরনায় গোসল, এমনকি চাইলে তাবুতে রাত কাটানোর মতো অভিযাত্রামূলক অভিজ্ঞতাও।

যেভাবে পৌঁছাবেন মহামায়া লেকে:

ঢাকা থেকে বাসে: ঢাকার যেকোনো প্রান্ত থেকে চট্টগ্রামগামী বাসে উঠে নেমে যেতে হবে মিরসরাইয়ের ঠাকুরদিঘী বাজারে।

ঢাকা থেকে ট্রেনে: ঢাকা থেকে ফেনী স্টেশনে নেমে অটো/রিকশায় ফেনী বাস স্ট্যান্ড, সেখান থেকে লোকাল বাসে ঠাকুরদিঘী বাজার। বিকল্পভাবে চিনকি আস্তানা স্টেশনে নামলেও মহামায়া যাওয়া যায়।

চট্টগ্রাম থেকে: মাদারবাড়ি, অলংকার সিটি গেট কিংবা কদমতলী থেকে লোকাল বাসে মাত্র ৪০–৮০ টাকায় পৌঁছে যাবেন ঠাকুরদিঘী বাজার। সেখান থেকে জনপ্রতি ১৫–২০ টাকা সিএনজি ভাড়ায় পৌঁছানো যাবে মহামায়া ইকো পার্ক এর গেটে।

সিলেট থেকে: বাসে মিরসরাই বা ট্রেনে ফেনী স্টেশন, সেখান থেকে আগের মতো একই রুটে ঠাকুরদিঘী হয়ে মহামায়া।

ভ্রমণ অভিজ্ঞতা: কী করবেন, কোথায় যাবেন?

কায়াকিং ও নৌকা ভ্রমণ: মহামায়া লেকের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো কায়াকিং। স্বচ্ছ পানির ওপর বৈঠা চালিয়ে প্রকৃতির গভীরে হারিয়ে যাওয়ার অনুভূতি যে কারও জন্যই স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ১ ঘণ্টা: ৩০০ টাকা, ৩০ মিনিট: ২০০ টাকা

শিক্ষার্থীদের জন্য: ১ ঘণ্টা – ২০০ টাকা, ৩০ মিনিট – ১৫০ টাকা। সময়: সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫:৩০ পর্যন্ত।

ইঞ্জিনচালিত নৌকা ভ্রমণ:

৮–১০ জন: ৮০০–১০০০ টাকা, ১৫–২০ জন: ১২০০–১৫০০ টাকা, এই নৌকাগুলো আশেপাশের ঝরনাসহ জায়গা ঘুরিয়ে দেখায়।

ক্যাম্পিং: লেকের পাড়ে তাবুতে রাত কাটানোর সুযোগ আছে। তবে অবশ্যই কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে।

আশপাশের দর্শনীয় স্থান: মহামায়া লেক ভ্রমণের পাশাপাশি ঘুরে দেখতে পারেন খৈয়াছড়া ঝর্ণা, নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা, কমলদহ ঝর্ণা, সীতাকুণ্ড ইকোপার্ক, চন্দ্রনাথ পাহাড়, গুলিয়াখালি, বাঁশবাড়িয়া, সী বিচ।

টিকিট ও খরচ: বিষয় মূল্য পার্ক প্রবেশ ১০ টাকা, কায়াকিং (১ ঘণ্টা) ৩০০ টাকা, কায়াকিং (৩০ মিনিট) ২০০ টাকা, ছাত্রছাত্রী ছাড়ে ২০০ / ১৫০ টাকা, নৌকা ভাড়া (৮-১০ জন) ৮০০–১০০০ টাকা, নৌকা ভাড়া (১৫-২০ জন), ১২০০–১৫০০ টাকা।

খাবার ও থাকার ব্যবস্থা: পার্কের ভিতরে খাবারের ব্যবস্থা নেই, তাই নিজের খাবার সঙ্গে নেয়া শ্রেয়। ঠাকুরদিঘী বাজার, মিরসরাই, সীতাকুণ্ড কিংবা বারইয়ারহাট বাজারের হোটেলে খেতে পারবেন।

থাকার জায়গা: মিরসরাইয়ে উন্নত মানের হোটেল নেই।

সীতাকুণ্ডে: হোটেল সৌদিয়া (৬০০–১৬০০ টাকা), সাইমুন হোটেল (৩০০–৭০০ টাকা) যোগাযোগ: 01991-787979, 01816-518119

চট্টগ্রাম শহরে থাকা উত্তম, বিশেষত নিউ মার্কেট বা অলংকার মোড় এলাকায়।

মহামায়া লেক শুধু একটা গন্তব্য নয়, এটি একটি অনুভব—যেখানে পাহাড়, জল, বাতাস ও সবুজের মধ্যে আপনি নিজেকে হারিয়ে ফেলার একটা সুযোগ পাবেন। বাংলাদেশে যাঁরা একটু অন্যরকম ভ্রমণ খুঁজছেন, তাঁদের জন্য মহামায়া লেক হতে পারে নিখুঁত এক গন্তব্য।

এমন আরও সংবাদ

Back to top button