চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা নদীতে আবারও ভেসে উঠছে মরা মাছ। নদীপাড়ে ছড়াচ্ছে তীব্র দুর্গন্ধ, আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ধারণা করা হচ্ছে, শীতলক্ষ্যা ও বুড়িগঙ্গা নদীর দূষিত পানি মেঘনায় মিশে এই বিপর্যয়ের সৃষ্টি করেছে।গত দুই দিন ধরে ষাটনল থেকে দশানী পর্যন্ত নদীপাড়জুড়ে দেখা যাচ্ছে মরা মাছের স্তূপ।
বিশেষ করে জাটকা, চেউয়া, বাইলা, টেংরা, পুঁটি, চাপিলাসহ বিভিন্ন দেশি প্রজাতির মাছ মরে যাচ্ছে। ফলে পানির ব্যবহারেও ঝুঁকি দেখছেন স্থানীয়রা।জেলে শ্যামল চন্দ্র বর্মন বলেন, ‘এই নদীই আমাদের জীবন। কিন্তু এখন এই পানিতে মাছ নেই, বরং বিষ ছড়িয়ে গেছে।
কয়েক বছর ধরে এমন হচ্ছে, কেউ কোনো ব্যবস্থা নেয় না।’মাছ ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম জানান, ‘আজকে যা দেখলাম, তাতে আগামী কয়েক মাস নদী থেকে মাছ পাওয়া যাবে না। বাজারে মাছের দাম বাড়বে, মানুষ কষ্টে পড়বে।’
স্থানীয় বাসিন্দা আল আমিন সরকার বলেন, ‘বাচ্চারা নদীতে গোসল করতে পারে না, পানি ব্যবহার করতেও ভয় লাগে।
এ বিষয়ে কলাকান্দা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. শামসুদ্দিন জানান, ‘এই দূষণ শুধু পরিবেশ নয়, মানুষের জীবিকার ওপরও আঘাত। আমি বিষয়টি উপজেলা পরিষদ ও জেলা প্রশাসনে তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’মতলব উত্তর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিজয় কুমার দাস বলেন, ‘এটি নিছক মাছ মরার ঘটনা নয়, এটি জলজ পরিবেশগত দুর্যোগ। এর আগে ২০২৩ সালের মার্চ ও ২০২৪ সালের আগস্টে একই ঘটনা ঘটেছিল। এবার ক্ষতির মাত্রা আরো বেশি।
পরিবেশ আন্দোলন সংগঠন ‘মতলবের মাটি ও মানুষ’-এর সভাপতি শামীম খান বলেন, ‘দ্রুত আন্ত জেলা পরিবেশ কমিশন গঠন এবং দূষণকারী কারখানার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।’
চাঁদপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মিজানুর রহমান জানান, চলতি বছরের জানুয়ারিতে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে নদীর পানিতে অ্যামোনিয়ার মাত্রা বৃদ্ধির পাশাপাশি অক্সিজেন ও পিএইচ কমে যাওয়ার কথা উঠে এসেছে। নদীর তলদেশ দিয়ে কারখানার বর্জ্যবাহী পানি প্রবাহিত হওয়াও দূষণের বড় কারণ।তিনি বলেন, ‘নতুন করে কেন আবার মাছ মারা যাচ্ছে, তা তদন্ত সাপেক্ষে বলা যাবে। কেউ এখনো সরাসরি অভিযোগ দেয়নি, ঘটনাস্থলে গিয়ে বিস্তারিত জানা সম্ভব হবে।’
নদীকেন্দ্রিক হাজারো পরিবারের জীবিকা আজ হুমকির মুখে। স্থানীয়দের দাবি, ‘নদী বাঁচলে আমরা বাঁচব’—এটাই এখন সবার মূল স্লোগান হওয়া উচিত।