বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর কিছু বন
কিছু পার্থিব সৌন্দর্য উপভোগের অভিজ্ঞতা হয় অনেক বেশি শান্তিপূর্ণ ও মনোরম। একটি বনের মাঝে দাঁড়িয়ে এমন অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ হয়। গাছপালা, পশুপাখিতে ঘেরা বন অনেকেরই প্রিয়। শহুরে জীবন নিয়ে খুব বেশি ক্লান্ত বা বিরক্ত? মাঝেমাঝে নিশ্চয়ই ইচ্ছে করে সবুজের ভিড়ে হারিয়ে যেতে? ২,০০০ বছর বয়সী রেডউড, আলো আটকে দাঁড়িয়ে থাকা বিশালদেহী গাছের ভিড়, সবুজ রঙের কার্পেট দ্বারা মাটি আচ্ছাদিত ছোট গাছের দল, পাইনের মধ্যে নিজেকে হারিয়ে ফেলা, আরো কত কত নাম না জানা গাছের মেলা এক বনে! জেনে নিন জাপান থেকে শুরু করে আমাজন পর্যন্ত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও রহস্যে ভরপুর বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর কয়েকটি বন সম্পর্কে।
১. আরাশিয়ামা ব্যাম্বো গ্রোভ, কিয়োটা, জাপান:
কিয়োটার এই বাঁশের গ্রোভের অলৌকিক উজ্জ্বলতা আর অসাধারণ সৌন্দর্য আপনাকে শুধু অবাকই করবে না, আপনার মনকে ঘিরে রাখবে মুগ্ধতায়। যখন আপনি চোখ বন্ধ করে দাঁড়াবেন এই অসাধারণ জায়গাটিতে, আপনি স্পষ্ট শুনতে পাবেন পাখির ডানা ঝাপটে উড়ে বেড়ানোর শব্দ, মনোমুগ্ধকর অসংখ্য পাখির চেনা-অচেনা ডাক, গাছের কড়কড় আওয়াজ, শুকনো পাতা ঝরে পড়ার খচখচে সুর। জায়গাটি আপনাকে মুগ্ধ ও বিস্মিত করার পাশাপাশি আরো অনেকটা কাব্যিক করে তুলবে।
২. গ্রেট বিয়ার রেইনফরেস্ট, ব্রিটিশ কলাম্বিয়া, কানাডা:
ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার এই গ্রেট বিয়ার রেইনফরেস্ট আয়তনে প্রায় আয়ারল্যান্ডের সমান এবং এই বনটি শত শত প্রজাতির প্রাণীর (যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিরল প্রজাতির নেকড়ে ও বিরল প্রজাতির তিমি) আবাসস্থল। এই গ্রেট বিয়ার রেইনফরেস্ট বিশ্বের সবচেয়ে জীব বৈচিত্র্যপূর্ণ স্থানগুলোর মধ্যে একটি। বনের পাশাপাশি সমুদ্রের খাঁড়ি, অসাধারণ জলপ্রপাত, বৃহদায়তন দারূবৃক্ষ এবং ৪,০০০ ফুট খাঁড়া বাঁধ সহ অসংখ্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মিলিয়ে জায়গাটি অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর।
৩. আমাজন:
দক্ষিণ আমেরিকার প্রায় ৪০ শতাংশ ঘিরে এই আমাজন। আমাজন পৃথিবীর বৃহত্তম রেইনফরেস্ট। এই জায়গাটি ৪০ হাজারেরও বেশি প্রজাতির উদ্ভিদ এবং প্রায় ১,৩০০ প্রজাতির পাখির আবাসস্থল। জায়গাটি আপনাকে প্রচণ্ডভাবে বিস্মিত করবে।
আঁকাবাঁকা বিশাল নদী ছড়িয়ে গেছে এই বনের অনেকটা জুড়ে। হাজার হাজার প্রজাতির গাছের সবুজের ভিড়ে হারিয়ে যাবেন সহজেই। এছাড়াও এখানকার বিশাল জীব বৈচিত্র্য অবাক করবে নিঃসন্দেহে। পায়ে হেঁটে কিংবা নদী পথে উপভোগ করতে পারবেন এ বনের সৌন্দর্য।
৪. ড্রাগন ব্লাড ফরেস্ট, সকোট্রা, ইয়েমেন:
ইয়েমেনের মূল ভূখন্ড থেকে প্রায় ২২০ মাইল দূরে অবস্থিত সকোট্রা। আপনার মনে হতেই পারে পৃথিবী থেকে দূরের কোনো গ্রহে যাচ্ছেন। এখানকার সৌন্দর্য অন্যান্য জায়গা থেকে একেবারেই আলাদা। আপনি কাছ থেকে এখানকার দৃশ্য দেখে অবাক হতে বাধ্য হবেন। অসংখ্য ড্রাগন গাছ এবং সেসবে এসে পড়া লাল আলোর খেলা আপনার বিস্মিত ও অবাক হওয়ার পরিমাণ বাড়িয়ে তুলবে অনেক বেশি।
৫. হ্যামবল্ট রেডউডস স্টেট পার্ক, ক্যালিফোর্নিয়া:
বন মানেই অনেকের ভালো লাগা। তাছাড়া ক্যালিফোর্নিয়ার নিজস্ব আলাদা এক সৌন্দর্য তো রয়েছেই। হ্যামবল্ট রেডউডস স্টেট পার্ক অসাধারণ একটি জায়গা। লাল লাল গাছের ভিড়ে নিজেকে উপলব্ধি করা নয়, আপনার জন্য সবচেয়ে বেশি অবাক করার বিষয় হবে ২ হাজার বছরেরও পুরনো ৩০০ ফুট উচ্চতার প্রাকৃতিক দানবের (বৃক্ষের) সামনে দাঁড়িয়ে থাকা। এ বনটি এমনই সব দানবীয় আকৃতির বৃক্ষে ভরা।
৬. ভ্যালি ডি কোকোরা, কুইন্দিয়া, কলম্বিয়া:
যদি আপনি পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু পাম গাছ খুঁজে পেতে চান, তবে আপনার জন্য রয়েছে ভ্যালি ডি কোকোরা। কলম্বিয়ার এই জায়গাটির বাইরে আপনার আর ভিন্ন কোনো জায়গা নিয়ে ভাবার দরকার নেই। আপনি আশ্চর্যজনকভাবে এই জায়গাটিকেই মেনে নেবেন আপনার কাঙ্ক্ষিত গন্তব্য হিসেবে। কলম্বিয়ার কোকোরা উপত্যকায় নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে থাকা এই গাছগুলো অনেকটা কুয়াশাচ্ছন্নর মতো চারপাশ আচ্ছন্ন করে রাখে সবুজে। সবুজ পাহাড় ও চকচকে পর্বতের সৌন্দর্যকে কিছুটা ফিকে করে আরো অনেক বেশি অবাক করা সৌন্দর্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এই বন।
৭. ক্রোকেড ফরেস্ট, গ্রেফিনো, পোল্যান্ড:
পোল্যান্ডের পাইন গাছের এই স্থানটিকে অনেকটা সাই-ফাই চলচ্চিত্রের মতো দেখায়, কারণ এখানকার গাছের আকারগুলো প্রকৃতপক্ষে রহস্যে ঘেরা। সবচেয়ে প্রচলিত তত্ত্বটি অনুসারে, এখানকার বনকর্মীরা অত্যন্ত নিপুণভাবে ও বিশেষ কিছু কৌশলে এই গাছের চারাগুলো রোপন করেছিলেন ১৯৩০ এর দশকে, তাদের ফার্নিচারের জন্য প্রাকৃতিকভাবে বাঁকানো কাঠের যোগান দিতে। তবে কারো কারো মতে, গাছের এই অদ্ভুত বাঁকানো আকৃতির কারণ পূর্বের শক্তিশালী কোনো ঝড় কিংবা মহাকর্ষীয় টান।
৮. ওটজারেটা ফরেস্ট, বাস্ক কান্ট্রি, স্পেন:
বাস্ক কান্ট্রির গোরবেয়া প্রাকৃতিক পার্ক একটি সুরক্ষিত এলাকা, যেখানটায় ভ্রমণকালে আপনি দেখা পাবেন পাহাড়ি দৃশ্যের, সুযোগ পাবেন পায়ে হেঁটে ভ্রমণের, দেখতে পাবেন অসাধারণ জলপ্রপাত এবং বিস্ময়কর কিছু গুহা। এটি এমন নিখুঁত একটি বন যা অনেক ফটোগ্রাফারদের (এবং Pinterest ইউজারদের) আকৃষ্ট করে থাকে তার পৃষ্ঠতলের বিশালাকার মোটা এবং প্রাচীন গাছ দিয়ে।
৯. মন্টেভেরডি ক্লাউড ফরেস্ট, কোস্টারিকা:
এটি অত্যন্ত সুন্দর একটি বন। এই জায়গাটিতে ভ্রমণ আপনার জন্য দুর্দান্ত এক অনুভূতি তুলে রাখবে। কোস্টারিকা তার জীব বৈচিত্র্যের জন্য অত্যন্ত পরিচিত একটি নাম। এর সত্যতা যাচাই করতে চাইলে আপনার যেতে হবে এই বনটি ঘুরে দেখতে। এখানে দেখা পাবেন অসংখ্য সরীসৃপ প্রাণীর, নানা প্রজাতির অসংখ্য পাখির এবং অসংখ্য সোনালী ব্যাঙের। পাশাপাশি বিশ্বের সর্বোচ্চ বৈচিত্র্যময় (পরিচিত ৫০০ প্রজাতিরও অধিক) গোলাপ ছড়িয়ে রয়েছে প্রায় ২৬ হাজার একর ভূখণ্ড জুড়ে।
তথ্য: ghuraghuri