এক্সক্লুসিভ নিউজজাতীয়দেশজুড়েনির্বাচনলিড নিউজ

তৃতীয় ধাপে সারাদেশে ইউপি নির্বাচনে আ.লীগ ৫২৫, স্বতন্ত্র ৪৮৩টিতে জয়ী

তৃতীয় ধাপে সারাদেশে ইউপি নির্বাচনে আ.লীগ ৫২৫,  স্বতন্ত্র ৪৮৩টিতে জয়ীঢাকা: দশম ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নির্বাচনে (ইউপি) তৃতীয় ধাপে সারাদেশে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জয়জয়কার। গত ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ১০০৮ ইউপি নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল অনুযায়ী ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা নৌকা প্রতীক নিয়ে ৫২৫টি ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে জয়লাভ করেছেন। বিপরীতে ৪৮৩টি ইউপিতে স্বতন্ত্রসহ অনান্য দল থেকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তবে স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচিতদের একটা বড় অংশ ক্ষমতাসীন দল থেকে মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে জয়লাভ করেছেন।

নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এবারের ইউপি নির্বাচনে দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপি অংশ নিচ্ছে না।

তৃতীয় ধাপের নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল: এদিকে তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে ৭৪ দশমিক ২১ শতাংশ ভোট পড়েছে।

এই ধাপের ১০০৮ টি ইউপি নির্বাচনে চূড়ান্ত ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ থেকে বিজয়ী হয়েছেন ৫২৫ জন প্রার্থী। স্বতন্ত্র থেকে থেকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন ৪৪৬ জন প্রার্থী। প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি থেকে ১৭ জন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে ১ জন, ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে ১ জন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম থেকে ১ জন, এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) থেকে ১ জন প্রার্থী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।

গত ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত তৃতীয় ধাপে ১০০০টি ইউপিতে বিভিন্ন পদে ৫০ হাজার ১৪৬ জন প্রার্থী নির্বাচনে তিনটি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৪ হাজার ৪০৯ জন, সাধারণ সদস্য পদে ৩৪ হাজার ৬৩২ জন এবং সংরক্ষিত সদস্য পদে ১১ হাজার ১০৫ জন প্রার্থী চূড়ান্ত প্রতিযোগীতায় নির্বাচনে অংশ নেয়।

নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ২ কোটি ১ লাখ ৪৯ হাজার ২৭৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ কোটি ২ লাখ ১৫ হাজার ৪২৩ জন, মহিলা ভোটার ৯৯ লাখ ৩২ হাজার ৫৩০ জন। এছাড়াও হিজড়া ভোটার ১৯ জন। নির্বাচনে মোট ভোট কেন্দ্রের ১০ হাজার ১৫৯টি।

ইসি সূত্র জানায়, তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে এরইমধ্যে ৫৬৯ জন প্রার্থী ভোটের আগেই নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ১০০ জন, সাধারণ সদস্য পদে ৩৩৭ জন এবং সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ১৩২ জন প্রার্থী ভোটের আগেই নির্বাচিত হয়েছেন।

দ্বিতীয় ধাপেও ছিল হাড্ডাহাড্ডি লড়াই: গত ১১ নভেম্বর দেশের ৮৩৪ ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা নৌকা প্রতীক নিয়ে ৪৮৬টি ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে জয়লাভ করেন। বিপরীতে ৩৪৮টি ইউপিতে জয় পান স্বতন্ত্রসহ অনান্য দলের প্রার্থীরা। তবে স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচিতদের একটা বড় অংশ আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী।

চূড়ান্ত ফলাফল অনুযায়ী, আওয়ামী লীগ থেকে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হন ৪৮৬ জন প্রার্থী। স্বতন্ত্র থেকে থেকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন ৩৩০ জন। প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি থেকে ১০ জন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে চারজন এবং জাতীয় পার্টি (জেপি), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), খেলাফত মজলিস ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের একজন করে প্রার্থী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

দ্বিতীয় ধাপে ৮৩৪টি ইউপিতে বিভিন্ন পদে ৪১ হাজার ২১৮ জন প্রার্থী নির্বাচনে তিনটি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এরমধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৩ হাজার ৩১০ জন, সাধারণ সদস্য পদে ২৮ হাজার ৭৪৭ জন এবং সংরক্ষিত সদস্য পদে ৯ হাজার ১৬১ জন প্রার্থী চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় নির্বাচনে অংশ নেন। নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৬৫ লাখ ৯৫ হাজার ২২৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৮৪ লাখ ৫ হাজার ৮৩১ জন, মহিলা ভোটার ৮১ লাখ ৮৯ হাজার ৩৭৯ জন। নির্বাচনে মোট ভোট কেন্দ্র ছিল ৮ হাজার ৪৯২টি।

প্রথম ধাপে আ. লীগ ১৪৮, স্বতন্ত্র ৪৯: গত ২১ জুন প্রথম ধাপে ২০৪ ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে ১৪৮টিতেই আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নৌকা প্রতীক নিয়ে জয়লাভ করেছেন। অন্যদিকে স্বতন্ত্র থেকে ৪৯ জন এবং তিনটি বিরোধী রাজনৈতিক দল থেকে বাকি ৭ জন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে জয়লাভ করেন।

প্রথম ধাপের ২০৪টি ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত জয়ী ১৪৮জন প্রার্থীর মধ্যে ১২০ জন সরাসরি ভোটে এবং বাকী ২৮ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এ ছাড়াও ৪৯টি ইউপিতে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী নির্বাচিত হন। তবে স্বতন্ত্রদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন না পেয়ে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে জয়লাভ করেন। এর বাইরে তিনটি বিরোধী রাজনৈতিক দল থেকে নির্বাচিত ৭ জনের মধ্যে জাতীয় পার্টি (জেপি) থেকে বাইসাইকেল প্রতীক নিয়ে ৩ জন, জাতীয় পার্টি থেকে লাঙল প্রতীক নিয়ে ৩ জন এবং হাতপাখা প্রতীক নিয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে ১ জন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

প্রথম ধাপে ১৩ জেলার ৪১টি উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন হয়। এগুলো হলো— পটুয়াখালি জেলার দুমকি, বাউফল, দশমিনা ও গলাচিপা; রংপুর জেলার পীরগাছা; বগুড়া জেলার দুপচাঁচিয়া; বরিশাল জেলার বরিশাল সদর, বাকেরগঞ্জ, উজিরপুর, মুলাদী, মেহেদীগঞ্জ, বাবুগঞ্জ, গৌনদী, হিজলা, বানারীপাড়া; বরগুনা জেলার বরগুনা সদর, আমতলী, বেতাগী, বামনা, পাথরঘাটা; পিরোজপুর জেলার পিরোজপুর সদর, ইন্দুরকানী, ভান্ডারিয়া, নেছারাবাদ, কাউখালি, নাজিরপুর উপজেলা; ঝালকাঠি জেলার ঝালকাঠি সদর উপজেলা, নলছিটি, রাজাপুর ও কাঠালিয়া উপজেলা। ভোলা জেলার বোরহানউদ্দিন, তজমুদ্দিন, মনপুরা, চরফ্যাশন; নরসিংদী জেলার পলাশপুর; গাজীপুর জেলার কালিগঞ্জ; মাদারীপুর জেলার শিবচর; সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক; লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি ও কমলনগর উপজেলা।

প্রথম ধাপের ২০৪টি ইউপি নির্বাচনে ৮৫৯ জন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এসব ইউনিয়নে সংরক্ষিত নারী সদস্যপদে ২ হাজার ১৫৪ জন এবং সাধারণ সদস্য পদে ৬ হাজার ৯৬০ জন প্রার্থী চূড়ান্তভাবে নির্বাচনে অংশ নেন। প্রথম ধাপের ইউপি নির্বাচনে ১ হাজার ৮৩৬টি ভোটকেন্দ্রের ১০ হাজার ২৬০টি ভোট কক্ষে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।

উল্লেখ্য বর্তমানে সারাদেশে ৪ হাজার ৫৭১টি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এরইমধ্যে ৯ বার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে ১৯৭৩ সালে প্রথম ইউপি নির্বাচন এবং সর্বশেষ ২০১৬ সালে নবম ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়াও ১৯৭৭, ১৯৮৩, ১৯৮৮, ১৯৯২, ১৯৯৭, ২০০৩, ২০১১ ইউপি নির্বাচন হয়েছে। চলতি ২০২১ সালে জুন জুলাই মাস থেকে শুরু হয়েছে দশম ইউপি নির্বাচন।

এমন আরও সংবাদ

Back to top button