কক্সবাজারে পুলিশ চেকপোস্টে সংঘঠিত অপ্রত্যাশিত ঘটনায় বাংলাদেশ পুলিশ এসোসিয়েশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
এক্সক্লুসিভ নিউজ ডেস্ক: মহান মুক্তিযুদ্ধে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ২৫শে মার্চ কাল রাতে পাকিস্তানী হানাদারদের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী। ফলশ্রুতিতে মহান মুক্তিযুদ্ধে একক বাহিনী হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশের বেশি সংখ্যক সদস্য শাহাদাত বরণ করেন। আত্মত্যাগের সেই মহান ব্রত নিয়ে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর প্রতিটি সদস্য সর্বদা দেশ ও জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে। বিগত ৩১ জুলাই ২০২০ রাতে কক্সবাজারে সেনাবাহিনীর মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান পুলিশের চেকপোস্টে অপ্রত্যাশিত, অনভিপ্রেত ও অনাকাঙ্খিতভাবে নিহত হন।
এ ঘটনার নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্তের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির তদন্ত চলাকালীন নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলাটি বর্তমানে র্যাব তদন্ত করছে। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যগণ দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিজ্ঞ আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন। বিগত ০৫ আগস্ট ২০২০ তারিখ সম্মানিত সেনা প্রধান ও পুলিশ প্রধান কক্সবাজারে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তখন তাঁরা যৌথ সংবাদ সম্মেলনে নিরপেক্ষ ও প্রভাবমুক্ত পরিবেশে তদন্ত সম্পন্নের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ব্যক্তির কোন দায় প্রতিষ্ঠান বহন করবে না মর্মে তাঁরা ঘোষণা প্রদান করেছেন। স্বাধীনতা উত্তরকাল হতে দেশের বিভিন্ন দুর্যোগ ও জরুরী প্রয়োজনে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দায়িত্ব পালনের বিষয়টি উভয় বাহিনী প্রধান পুনর্ব্যক্ত করেন। ঐ সভায় কক্সবাজার জেলার সংশ্লিষ্ট এলাকায় সেনা এবং পুলিশের যৌথ টহলের উদ্যোগ গ্রহন করা হয়। গৃহীত এই উদ্যোগের জন্য বাংলাদেশ পুলিশ এসোসিয়েশন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর প্রধানদ্বয়ের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা ও বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রজ্ঞাবান নেতৃত্বে প্রায় একযুগে বাংলাদেশ বিস্ময়করভাবে অর্থনৈতিক সাফল্য ও সামাজিক স্থিতিশীলতা অর্জন করে চলেছে। আর সামাজিক স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ বিনির্মানে রয়েছে পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। বর্তমান করোনা মহামারীতে শুরু থেকেই সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে লড়াই করে যাচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি সদস্য। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা, অসহায় ও দরিদ্রের মাঝে ত্রান বিতরণ, আক্রান্তদের হাসপাতালে প্রেরনের ব্যবস্থা, কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা, করোনায় মৃত ব্যক্তির লাশের জানাযা ও দাফন সম্পন্নসহ নানাবিধ মানবিক কাজ করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। করোনা পরিস্থতিতে সবাই যখন স্বজন নিয়ে ঘরে ছিলেন, তখন পরিবার ও প্রিয়জনকে দূরে রেখে মানুষকে সেবা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ১৫,৫০০ জন পুলিশ সদস্য এবং এ পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেছেন ৬৭ জন। শুধুমাত্র করোনা কালেই নয়, জঙ্গি কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ, সারাদেশে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, মাদক নিয়ন্ত্রণ, জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে ২৪ ঘন্টা সেবা প্রদানসহ প্রতিনিয়ত সাধারণ মানুষের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে কার্যকর ভূমিকা রাখছে বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি সদস্য।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর মধ্যে সুদীর্ঘকাল পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসের সম্পর্ক বিদ্যমান। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করেছি, কিছু-কিছু স্বার্থান্বেষি ব্যক্তি/মহল বা সংগঠন জনগণের কাছে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীকে বিতর্কিত ও অগ্রহণযোগ্য করার জন্য বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় উল্লেখিত ঘটনার বিষয়ে বিভিন্ন উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রদান করছেন। দুটি ঐতিহ্যবাহী ও ভ্রাতৃপ্রতিম বাহিনীকে বিভিন্ন অনাকাঙ্খিত বক্তব্য ও অনভিপ্রেত মন্তব্য ইত্যাদির মাধ্যমে মুখোমুখি দাঁড় করানোর অপপ্রয়াসে লিপ্ত হয়েছেন। এই অপপ্রচার চলমান বিচারিক ও প্রশাসনিক অনুসন্ধান প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এ ধরণের উদ্দেশ্য প্রণোদিত অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, জনবান্ধব ও গণমুখী পুলিশ ব্যবস্থাকে আরো শক্তিশালী করার জন্য সব ধরণের সহযোগিতা ও উৎসাহ অব্যাহত রাখতে বাংলাদেশ পুলিশ এসোসিয়েশন সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহবান রাখছে।
গতকাল সোমবার (১৭ আগস্ট) বাংলাদেশ পুলিশ এসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের বিমান বন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ বি এম ফরমান আলী এবং সাধারণ সম্পাদক ও যাত্রাবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ মাজহারুল ইসলাম বিপিএম, পিপিএম (বার) স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়।