এক্সক্লুসিভ নিউজজাতীয়লিড নিউজ

“ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন প্রতি ধাপে বাড়ছে সহিংসতা”

 ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন প্রতি ধাপে বাড়ছে সহিংসতা : ইসিঢাকা : সারা দেশে তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন শেষ হলো। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের ব্যাপক সহিসংতার পর আটঘাট বেঁধে পরবর্তী ভোটের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সহিংসতা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর হওয়ার নির্দেশনা দেওয়া ছিল। কিন্তু তাতে কিছুই হলো না। তৃতীয় দফার এই ভোটকে ঘিরে সংঘাতে প্রাণ গেছে অন্তত ১৪ জনের। আহতের সংখ্যাও আড়াই শ ছাড়িয়ে গেছে। এর আগের দুই ধাপের ভোটে ১১ জন নিহত হয়েছিল।

দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রার্থীদের জয়-পরাজয় নিয়ে এখনো সহিংসতা চলমান। যদিও ইসি সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার এই ভোটকে সহিংসতাবিহীন নির্বাচনের মডেল বলে দাবি করেছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর নজরদারিতে ছিল পুরো ভোট জুড়ে। এমন পরিস্থিতিতে গতকাল ইসি বিষয়টিকে দুঃখজনক ও অপ্রত্যাশিত বলে মন্তব্য করেছে। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকেও বলা হচ্ছে এসব রক্তপাতের ঘটনার নেপথ্যে তাঁদের গাফিলতি রয়েছে কি না, সেসব খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অন্যদিকে বিশ্লেষকেরা বলছেন, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা ক্ষমতাসীনদের মধ্যে হওয়াতেই ফায়দা লুটার জন্য এমন সহিংস ঘটনা ঘটছে। এমনকি ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারাও বলছেন, অসুস্থ প্রতিযোগিতা দলকে বিড়ম্বনায় ফেলেছে।

চলতি মাসে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই বছরের মার্চ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত আট মাসে সারা দেশে ইউপি নির্বাচনে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে ২১০টি। এতে আহত হয়েছেন ২ হাজার ৫৪৩ জন। প্রাণ হারিয়েছেন ৪০ জন। আর শুধু নভেম্বরেই দুই দফার ভোটকে কেন্দ্র করে নিহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক ব্যক্তি।

আমাদের বরগুনা প্রতিনিধি জানান, পাথরঘাটায় ইউপি নির্বাচন পরবর্তী প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে সহিংসতায় অন্তত ১১ জন আহত হয়েছেন। গত রোববার ভোটের ফলাফল ঘোষণার পর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে এ ঘটনা ঘটে।

আমাদের সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, উল্লাপাড়ায় নির্বাচনী সহিংসতায় আহত দেলোয়ার হোসেন সাগর (১৬) নামে এক এসএসসি পরীক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল ভোরে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। নিহত দেলোয়ার হোসেন সাগর মাছিয়াকান্দি গ্রামের আবদুল লতিফের ছেলে।

পাবনার ঈশ্বরদীতে ইউপি নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা এবং বিজয় মিছিল থেকে বাড়িঘর-দোকানে হামলা চালানোর ঘটনা ঘটেছে। এতে নারী স্কুলশিক্ষকসহ অন্তত ১২ জন আহত হয়েছেন।

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বদরখালীতে পরাজিত প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকের হামলায় নৌকা প্রতীকের এক সমর্থক নিহত হয়েছে। গত রোববার রাত পৌনে ১০টার দিকে বদরখালী ইউনিয়নের হাফেজখানা সড়কে এ ঘটনা ঘটে। নিহত গিয়াস উদ্দিন মিন্টু (৪৫) ১ নম্বর ব্লকের ঢেমুশিয়া পাড়ার মাস্টার আবুল মুসার ছেলে। হামলায় আরও পাঁচজন আহত হয়েছেন।

ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলায় গত রোববার সন্ধ্যার পর ভোট গণনার সময় বিজিবির গুলিতে চারজন নিহত ও ৬ জন আহত হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকার অজ্ঞাতনামা সাত শ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। উপজেলার ৩ নম্বর খনগাঁও ইউনিয়নের ৮ নং ঘিডোব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। ওই কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা সরকারি বণিক বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. জামাল উদ্দিন বলেন, ভোট গণনা শেষে কিছু মানুষ ভোটে কারচুপির অভিযোগ তোলেন।

নির্বাচনী সহিংসতার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, আমরা চাই না একটিও ঘটনা ঘটুক। কিন্তু কিছু কিছু জায়গায় রাতে সংঘর্ষ হয়। যা আগে থেকে জানা যায় না। এ সময় আসলে কিছু করারও থাকে না।

এ বিষয়ে পুলিশের সহকারী মহাপরিদর্শক মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘নির্বাচনে এমন ঘটনা দুঃখজনক। আমাদের আগে থেকেই প্রস্তুতি ছিল। এর মধ্যে আমরা অভিযান পরিচালনা করেছি। আটকও করেছি। তারপরেও এ ধরনের ঘটনায় পুলিশের কোনো গাফিলতি রয়েছে কিনা খতিয়ে দেখা হবে।’

সুশাসনের জন্য নাগরিকের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। ভোট সুষ্ঠু হয়েছে দাবি করা মানা যায় না। আসলে সহিংসতার ঘটনাগুলো ঘটছে রাজনীতির মধ্যে ব্যবসা ঢুকে যাওয়ার কারণে। আর দলীয় প্রতীকে নির্বাচন সেটাকে আরও উসকে দিয়েছে। ইসি তার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও ব্যবহার করতে পারছে না।’

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘সহিংসতার ঘটনা অনভিপ্রেত। কিন্তু স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এই ধরনের ঘটনা ঘটে, এটা নতুন কিছু না। এমন না যে এইবারে ঘটেছে।’

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘ইউপি নির্বাচনে সহিংসতা সব সময়ই ছিল। এটা কমানোর চেষ্টা আছে। এটাতো থাকবেই। সরকারের তরফ থেকে করছে। আমরা সাংগঠনিকভাবে আমাদের দলের থেকে এটা যেন না হয় সেটার নির্দেশনা দিয়েছি।’

সহিংসতা নিয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছেন, ইউপি নির্বাচনে যেভাবে সহিংসতা হচ্ছে তা সভ্য সমাজে মেনে নেওয়া যায় না। ইউপি নির্বাচনে চর দখলের মতো কেন্দ্র দখলের মহড়া হচ্ছে। হামলা পাল্টা হামলা আর খুনোখুনিতে ভীতিকর অবস্থা বিরাজ করছে গ্রামাঞ্চলে। দেশের মানুষ খুনোখুনির নির্বাচন চায় না। কোথাও কোথাও নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে দেওয়া হচ্ছে এমন অভিযোগও রয়েছে। তিনি বলেন, নির্বাচনকে অবাধ ও নিরপেক্ষ করতে নির্বাচন কমিশন পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সামনে অস্ত্রের মহড়া দেখে সাধারণ মানুষ ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ছে। আগামী নির্বাচনগুলো যেন অবাধ, নিরপেক্ষ ও উৎসবমুখর হয় সে জন্য কার্যকর উদ্যোগ নিতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

এমন আরও সংবাদ

Back to top button