ঈদে বিশেষ ট্রেন ১২টি, থাকবে মহিলা কামরা
রমজান শেষে আসছে খুশির ঈদ। এই সময়ে সড়কের যানজট মাথায় রেখে ঘরমুখো মানুষের চাপ বাড়ে রেলে। তাই ঈদযাত্রার সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে ৬ জোড়া (১২টি) বিশেষ ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। সেই সঙ্গে এবার আন্তঃনগর ট্রেনে নারী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ কামরাও যুক্ত করা হচ্ছে। এছাড়া আগামী ২৩ এপ্রিল থেকে বিক্রি শুরু হবে ঈদের অগ্রিম টিকিট।
বুধবার (১৩ এপ্রিল) দুপুরে রেল ভবনের সম্মেলন কক্ষে এসব তথ্য জানান রেলপথ মন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন। তিনি জানান, ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ করতে শুধু বিশেষ ট্রেনই নয় দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে চলমান সকল ট্রেনগুলোর সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
ঈদে টিকিট সংগ্রহ করতে হলে জাতীয় পরিচয়পত্র দরকার হবে। পরিচয়পত্র ছাড়া কোনো টিকিট বিক্রি করা হবে না। এছাড়া একজন যাত্রী চারটির বেশি টিকিট সংগ্রহ করতে পারবেন না।
অনলাইনে ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হবে সকাল ৮টা থেকে। কাউন্টারেও একই সময় অর্থাৎ সকাল ৮টা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত টিকিট পাওয়া যাবে। প্রতিটি স্টেশনে একটি করে কাউন্টার থাকবে নারী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য। ঈদের অগ্রিম টিকিট ফেরত নেওয়া হবে না। আর স্পেশাল ট্রেনের টিকিট অনলাইনে দেওয়া হবে না। কাউন্টার থেকে সংগ্রহ করতে হবে।
বিশেষ ট্রেন আগামী ২৯ এপ্রিল থেকে চলাচল শুরু করবে। যাত্রী পরিবহন ছাড়াও ঈদের দিন শোলাকিয়া স্পেশাল নামে দুটি ট্রেন চলবে।
ছয় জোড়া বিশেষ ট্রেন চাঁদপুর স্পেশাল-১ ও ২ চলবে চট্টগ্রাম- চাঁদপুর- চট্টগ্রাম রুটে। এটি ঈদের আগের দিন ২৯ এপ্রিল থেকে ১ মে পর্যন্ত এবং ঈদের পর ৪ মে থেকে ৮ মে পর্যন্ত চলাচল করবে। এছাড়া দেওয়ানগঞ্জ স্পেশাল ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ-ঢাকা রুটে চলবে ঈদের আগের দিন ২৯ এপ্রিল থেকে ১ মে পর্যন্ত এবং ঈদের পর ৪ মে থেকে ৮ মে পর্যন্ত চলাচল করবে।
আর খুলনা স্পেশাল (মৈত্রীর রেক দিয়ে) খুলনা -ঢাকা-খুলনা রুটে চলবে ২৯ এপ্রিল থেকে ১ মে পর্যন্ত। একইভাবে শোলাকিয়া স্পেশাল-১ চলবে ভৈরববাজার-কিশোরগঞ্জ। আর শোলাকিয়া স্পেশাল-২ চলবে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ রুটে। এই দুইটি ট্রেন চলবে ঈদের দিন। তবে এবার ঈদে আন্তঃনগর ট্রেনে নারী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য একটা বিশেষ কামরা যুক্ত করা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে রেলমন্ত্রী জানান, পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ট্রেন যাত্রীদের জন্য আগামী ২৩ এপ্রিল থেকে আগাম টিকিট বিক্রি শুরু করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে। যে সকল যাত্রী ২৭ এপ্রিল যাতায়াত করবেন তাদের ২৩ এপ্রিল জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে টিকিট সংগ্রহ করতে হবে। আর ২৮ এপ্রিল যাতায়াত করার জন্য টিকিট কাটতে হবে ২৪ এপ্রিল। একইভাবে ২৯ এপ্রিল যাতায়াত করার জন্য টিকিট কাটতে হবে ২৫ এপ্রিল, ৩০ এপ্রিল যাতায়াতের জন্য টিকিট কাটতে হবে ২৬ এপ্রিল এবং ১ মে যাতায়াতের জন্য টিকিট কাটতে হবে ২৭ এপ্রিল।
ঈদ শেষ করে ফিরে আসার জন্য ১ মে থেকে টিকিট বিক্রি শুরু হবে। ৫ মে যাতায়াতের টিকিট পাওয়া যাবে ১ মে। আর ৬ মে যাতায়াতের টিকিট কাটতে হবে ২ মে, ৭ মে যাতায়াতের জন্য টিকিট কাটতে হবে ৩ মে, ৮ মে যাতায়াতের জন্য টিকিট কাটতে হবে ৪ মে। এছাড়া ২, ৩ এবং ৪ মে টিকিট বিক্রি হবে চাঁদ দেখার ওপরে নির্ভর করে।
এদিকে, সকল পশ্চিমাঞ্চলগামী ও খুলনাগামী স্পেশাল ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাবে কমলাপুর স্টেশন থেকে। চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীগামী সকল আন্তঃনগর ট্রেনে টিকিট পাওয়া যাবে বিমানবন্দর কাউন্টার থেকে। আর ময়মনসিংহ, জামালপুরগামী ও দেওয়ানগঞ্জ স্পেশালসহ সকল আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাবে তেজগাঁও কাউন্টারে। এছাড়া মোহনগঞ্জগামী মোহনগঞ্জ ও হাওড় এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাবে ক্যান্টনমেন্ট কাউন্টার থেকে আর সিলেট ও কিশোরগঞ্জগামী সকল আন্তঃনগরগামী ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাবে ফুলবাড়িয়া (পুরাতন রেলওয়ে স্টেশন) থেকে।
এই পাঁচটি কেন্দ্র থেকে ঈদ উপলক্ষে টিকিট সংগ্রহ করা যাবে। টিকিটের মোট ৫০ শতাংশ টিকিট অনলাইনে এবং বাকি ৫০ শতাংশ টিকিট বিক্রি হবে কাউন্টারে। তবে ঈদে চালু করা স্পেশাল ট্রেনের কাউন্টার থেকেই এনআইডি দিয়ে টিকিট সংগ্রহ করা হবে।
ঈদের সাত দিন আগে ২৫ এপ্রিল থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত আন্তঃনগর ট্রেনের ডে অফ থাকবে না। ডে অফ প্রত্যাহারের ফলে অতিরিক্ত ৯২টি আন্তঃনগর ট্রেন বিশেষ ট্রিপ হিসেবে থাকবে। তবে ঈদের দিন কোনো আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করবে না। ঢাকা থেকে বহির্গামী ট্রেনের মোট আসন সংখ্যা হবে ২৬ হাজার ৬৬৩টি। ঢাকা থেকে আরও দুটি স্পেশাল ট্রেনের আরও ১৫০০ আসনের টিকিট কাউন্টার থেকে বিক্রি করা হবে।
রেলপথমন্ত্রী বলেন, সব সময়ই উৎসবের সময় যাত্রী সংখ্যা বেড়ে যায়। গেল দুই বছর করোনার কারণে মানুষ ঈদ উদযাপন করতে যাচ্ছে। আমরা বরাবরের মতো এবারও ঘরমুখো যাত্রীদের বাড়িফেরা নির্বিঘ্ন করতে ব্যবস্থা নিয়েছি। সম্ভাব্য ৩ মে ঈদ হতে পারে, সেটা ধরে নিয়ে আমরা পরিকল্পনা নিয়েছি।
রেলমন্ত্রী বলেন, টিকিট কালোবাজারি রোধে ঢাকা, বিমানবন্দর, জয়দেবপুর, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, সিলেট, রাজশাহী, খুলনাসহ সকল বড় স্টেশনে জিআরপি, আরএনবি, বিজিবি ও স্থানীয় পুলিশ ও র্যাবের সহযোগিতায় টিকিট কালোবাজারি প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে চলন্ত ট্রেনে বা রেললাইনে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা জোরদার করা হয়েছে। জরুরি সমস্যা নিরসনে কর্মকর্তা নিয়োজিত থাকবে। আর ভিজিলেন্স টিম টিকিট বিক্রির বিষয় মনিটর করবে। এছাড়া ঈদের দশ দিন আগে এবং পরে পর্যন্ত ট্রেনে সেলুন সংযোজন করা হবে না।