চট্টগ্রাম বিভাগদেশজুড়ে

আসতে শুরু করেছে কোরবানীর পশু

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে চট্টগ্রামে আসতে শুরু করেছে কোরবানির পশু। ইতোমধ্যে নগরীর সবচেয়ে বড় পশুর হাট সাগরিকা ও বিবিরহাটসহ বিভিন্ন হাট-বাজারে কোরবানির পশু এসে পৌঁছেছে।
আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে নাটোর, কুষ্টিয়া, সিরাজগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও উত্তরবঙ্গ থেকে গরু-মহিষ আসবে। এরপরই ক্রেতা-বিক্রেতার আনাগোনায় জমে উঠবে পশুর হাট। এমনটাই আশা ইজারাদারদের।
নগরীর সাগরিকা পশুর হাটের ইজারাদার ফজলে আলম চৌধুরী বলেন, হাটে এখনও বাঁশ পোঁতা এবং ত্রিপল টাঙানো থেকে শুরু করে সব লেনের নিচে ইটের আস্তর দিয়ে ফ্লোরিং করা হচ্ছে। এসব কাজ কালকের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।
এর মধ্যে বুধবার ভোরে কুষ্টিয়া থেকে কিছু গরু নিয়ে এসেছেন বেপারিরা। ১ জুলাই থেকে গরু-মহিষ-ছাগলে ভরপুর থাকবে হাট। সেই সঙ্গে আস্তে আস্তে আনাগোনা বাড়বে ক্রেতাদেরও। এবার চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় গড়ে ওঠা খামার এবং রাঙামাটির পাহাড় ও কক্সবাজার থেকেও গরু আসবে।
একইসঙ্গে ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, নাটোর, কুষ্টিয়া, সিরাজগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও উত্তরবঙ্গ থেকে আসা পশু নিয়েও বেপারিরা পশুর হাট সরগরম করবে। বহু পশু এখন পথের মধ্যে রয়েছে। পদ্মা সেতু দিয়ে আসার সুবিধা বাড়ায় এবার চট্টগ্রামে বিপুলসংখ্যক কোরবানির গরু আসার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান ইজারাদার ফজলে আলম চৌধুরী।

একই কথা বলেছেন বিবিরহাটের ইজারাদার সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, চট্টগ্রামে এবার প্রচুর গরুর চাহিদা রয়েছে। সে তুলনায় উৎপাদন হয়েছে অনেক কম, যা প্রায় এক লাখের মতো। সারা দেশ থেকে গরু না এলে চট্টগ্রামে এবার পশুর সঙ্কট দেখা দিতে পারে।

চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ দফতরের তথ্যমতে, চট্টগ্রামে এবার বিভিন্ন বাসাবাড়ি ও খামারে কোরবানিযোগ্য পশু উৎপাদন হয়েছে ৭ লাখ ৯১ হাজার ৫০১টি। এর মধ্যে ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৮০৩টি গরু, ৬৬ হাজার ২৩৭টি মহিষ, ১ লাখ ৮৯ হাজার ৩৬২টি ছাগল ও ভেড়া এবং অন্যান্য পশু ৯৯টি।
গত বছর জেলায় কোরবানি হয়েছে ৭ লাখ ৪২ হাজার ৪৫৫টি। চাহিদা পূরণে স্থানীয়ভাবে উৎপাদন হয়েছিল ৭ লাখ ৫৬ হাজার ৩৩৪টি (৩৭ হাজার ৭০০ লাল ষাঁড়সহ)। সে হিসাবে গত বছর উদ্বৃত্ত থাকলেও এবার ঘাটতি প্রায় ৩০ হাজার পশু।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. দেলোয়ার হোসেন বলেন, কাগজে-কলমে প্রায় ৩০ হাজার পশুর ঘাটতির কথা বলা হলেও বাস্তবে এই সংখ্যা আরও বাড়বে। এ সংখ্যা প্রায় এক লাখের মতো হতে পারে। ঘাটতির কারণে এবার কোরবানির পশুর দামও বেশ চড়া হতে পারে। এতে কোরবানি দাতাদের ওপর সরাসরি প্রভাব পড়তে পারে, যা নিয়ন্ত্রণে এবারের ঈদে অন্তত এক লাখ পশু দেশের অন্যান্য জেলা থেকে চট্টগ্রামে আসা প্রয়োজন।

অন্যদিকে বুধবার ভোরে কুষ্টিয়া থেকে ২৭টি গরু নিয়ে সাগরিকা পশুর হাটে পৌঁছেছেন মো. আনোয়ার। ৯০ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত গরুর দাম হাঁকিয়েছেন তিনি।
আনোয়ার বেপারি বলেন, ২৭টি গরু নিয়ে কুষ্টিয়া থেকে এসেছি। সড়কে যানজটসহ নানা সমস্যা থাকার কারণে আমরা হাট জমে ওঠার আগেই চলে এসেছি। দুপুর পর্যন্ত কোনো ক্রেতার আনাগোনা দেখিনি। হয়তো আর কিছুদিন পর থেকে পশুর হাট জমজমাট হবে এবং ক্রেতাদের ভিড় বাড়বে। এবারের কোরবানি ঈদে পশুর দাম কম থাকবে বলে দাবিও করেন তিনি।
কুষ্টিয়া থেকে ৩৫টি গরু নিয়ে আসা বেপারি আজম আলী বলেন, পশু লালন-পালনে খরচ দিন দিন বাড়ছে। সেই সঙ্গে হাটে গরু আনা থেকে শুরু করে বিক্রির শেষ দিন পর্যন্ত নিয়মিত ৯-১১ জনের খরচ চালাতে হবে। তাদের জনপ্রতি প্রতিদিন ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা দিতে হবে। গরুর পর্যাপ্ত দাম পেলে কোনো রকম পোষাতে পারব। আর যদি অল্প দামে গরু ছেড়ে দিতে হয়, তাহলে হয়তো দৈনিক খরচের টাকাও উঠবে না।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের অধীনে এবার তিনটি স্থায়ী ও তিনটি অস্থায়ী পশুর হাট বসছে। এগুলো হলো সাগরিকা বাজার, বিবিরহাট, পোস্তারপাড় ছাগলের হাট, সল্টগোলা রেলক্রসিং-সংলগ্ন হাট, কর্ণফুলী গরুবাজার (নূরনগর হাউজিং এস্টেট) ও দক্ষিণ পতেঙ্গার বাটারফ্লাই পার্কের দক্ষিণে টিকে গ্রæপের খালি মাঠ। সব পশুর হাট এখন পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে। করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে পশুর হাট বসার ক্ষেত্রে ১৭ শর্ত আরোপ করেছে বলে জানান চসিকের অ্যাসেস্ট অফিসার জসিম উদ্দিন চৌধুরী।

এমন আরও সংবাদ

Back to top button