প্রকৃতি বিরূপ, দুশ্চিন্তায় ২২ হাজার কৃষক
এক্সক্লুসিভ নিউজ, সিলেট : আষাঢ়ে বন্যায় ভেসে গেছে আউশ। শ্রাবণ-ভাদ্রের অনাবৃষ্টিতে করা যাচ্ছে না আমন চাষ। প্রকৃতির বিরূপ প্রভাবে বিপদে পড়েছেন সিলেটের বিশ্বনাথের ২২ হাজার কৃষক।
আষাঢ় মাসে মাত্রাতিরিক্ত বৃষ্টিপাতে সিলেট অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা হয়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হন উপজেলার প্রায় ৯২ শতাংশ চাষি। এরপর শ্রাবণ মাস থেকে ভাদ্র মাসের ১২ তারিখ পর্যন্ত এ অঞ্চলে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় শুকিয়ে যাচ্ছে নদ-নদী, হাওর ও জলাশয়। ফলে ব্যাহত হচ্ছে আমন চাষাবাদ। বিকল্প পদ্ধতি হিসেবে কৃষকরা ইঞ্জিনচালিত মেশিন দিয়ে পানি তুলে বীজতলা তৈরি করছেন। তবু চাষাবাদ করতে পারছেন না।
অনেকে মেশিন দিয়ে ঘণ্টা চুক্তিতে নদীনালা ও খাল থেকে একাধিকবার জমিতে পানি দিচ্ছেন। তাও আবার ৩-৪ ঘণ্টার বেশি পানি আটকাতে পারছেন না। তাতে খরচ বেশি হওয়ায় অনেকেই আমনের চারা রোপণের পর একবারের বেশি পানিও দিতে পারছেন না। এতে রোপণ করা আমন ক্ষেত ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে আমন চাষাবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন উপজেলার প্রায় ২২ হাজার কৃষক।
তীব্র রোদ ও অনাবৃষ্টিতে এ বছর আমনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়েও সংশয় রয়েছে। আবহাওয়াবিদ ও কৃষি কর্মকর্তাদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রকৃতিতে বিরূপ প্রভাব দেখা দিয়েছে। এর ফলে এমন দুর্যোগ।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেটের প্রধান আবহাওয়াবিদ সাইদ আহমদ চৌধুরী বলেন, অন্যান্য বছর জুন মাসে সিলেটে স্বাভাবিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৮১৮.৪ মিলিমিটার। কিন্তু চলতি বছর জুন মাসে ১৪৫৬.০২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে, যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৬৩৭.৬২ মিলিমিটার বেশি। চলতি আগস্ট মাসে ২৬ তারিখ পর্যন্ত মাত্র ২০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে, যা এ মাসের গড় বৃষ্টিপাত ৬১৫ মিলিমিটারের চেয়ে ৪১৫ মিলিমিটার বা ৬১ শতাংশ কম।
মৌজপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল রউফ বলেন, তিনি ১৮০ শতক জমিতে আমনের চারা রোপণ করেছেন। খরায় তাঁর ফসলের ক্ষেত ফেটে গেছে। উপায় না পেয়ে ২০০ টাকা ঘণ্টা হিসেবে ইঞ্জিনচালিত মেশিন দিয়ে কাছের বাসিয়া নদী থেকে পানি তুলছেন। ৩০ শতাংশ ক্ষেতে ৬ ঘণ্টা করে পানি দিতে হয়। কিন্তু তাও জমিতে পানি আটকাতে পারছেন না। এতে কেবল সেচেই শতাংশ প্রতি বাড়তি ২০০ টাকা অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে। সব মিলিয়ে ৩০ শতাংশতেই সাড়ে ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার খরচ হচ্ছে।
সৈয়দপুর সদুরগাঁওয়ের আল আমিন জানান, ৩৬০ শতক জায়গায় আমনের চাষাবাদ করেছেন। পানি না থাকায় ২১০ শতক রোদে পুড়ে গেছে। টাকার অভাবে পানি দিতে পারছেন না। সরকারি সহযোগিতা চান তিনি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কনক চন্দ্র রায় বলেন, চলতি মৌসুমে আমনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৩ হাজার ২০৫ হেক্টর। তবে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় ২৭ আগস্ট পর্যন্ত ৮ হাজার ৯৮০ হেক্টর অর্জিত হয়েছে। বৃষ্টিপাত না হলে এ বছর আমনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা কষ্টসাধ্য হবে।