চট্টগ্রাম নগরের অধিকাংশ কেন্দ্রই ‘ঝুঁকিপূর্ণ’
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম নগরের অধিকাংশ ভোটকেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এর মধ্যে নগরের কোতোয়ালি, বাকলিয়া, হালিশহর, পাহাড়তলী, চকবাজার ও আকবর শাহ থানার কেন্দ্রগুলোকে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
অতীতের সংঘাত, ব্যালট বাক্স ছিনতাই, কেন্দ্রে প্রার্থীদের প্রভাব ও গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এ তালিকা করেছে পুলিশ। অবশ্য পুলিশ ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র না বলে এসব কেন্দ্রকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ কেন্দ্র হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণের লক্ষ্যে তিন স্তরের নিরাপত্তা ছক সাজিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ভৌগলিক অবস্থান বিবেচনায় সাধারণ এলাকা, মেট্রোপলিটন এলাকা এবং উপকূলীয়, দুর্গম ও পার্বত্য এলাকার ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তার জন্য পৃথক সংখ্যক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন থাকবে।
ভোটকেন্দ্রের বাইরে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবেন সেনা ও নৌবাহিনীর সদস্যরা। র্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে টহল দেবেন।
নগর পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালি, বাকলিয়া, হালিশহর, পাহাড়তলী, চকবাজার, আকবর শাহ থানা এবং জেলার বাঁশখালী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, ফটিকছড়ি, সীতাকুণ্ড, সন্দ্বীপ এলাকার ভোটকেন্দ্রগুলো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্র বেশি রয়েছে নগরের চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি) ও চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুড়িং) আসনে।
এদিকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর পর সর্বশেষ গত বুধবার চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনের সরল ইউনিয়নে গণসংযোগকালে ধানের শীষ প্রতীকে প্রার্থী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী এবং রাঙ্গুনিয়ায় এলডিপিপ্রার্থী নুরুল আলমের ওপর হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর পক্ষ থেকে দাবি করা হয় যে, হামলাকারীরা গণসংযোগে ফাঁকা গুলিও করে।
এর আগে মঙ্গলবার চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনের সরল ইউনিয়নে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী লাঙ্গল প্রতীকের কর্মীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার অভিযোগ পাওয়া যায়।
এক সংবাদ সম্মেলনে মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী দাবি করেন, সেদিন গণসংযোগে কিছু অবৈধ অস্ত্রধারী ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে এবং মিছিলের মাইক ভাঙচুর করে। তারা সিএনজি ট্যাক্সি ও পিকআপ ভাঙচুর করে।
রোববার (১৬ ডিসেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের হালিশহর থানার নয়াবাজার এলাকায় চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুড়িং) আসনের বিএনপিপ্রার্থী ও আব্দুল্লাহ আল নোমানের বিজয় দিবসের র্যালিতে হামলার ঘটনা ঘটে।
এদিকে এসব সহিংসতার ঘটনা আতঙ্ক ছড়াচ্ছে ভোটারদের মাঝে। নগরের বাকলিয়া এলাকার নারী ভোটার হাফসা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, ‘সুষ্ঠুভাবে ভোট হবে কিনা- শঙ্কায় আছি। নিরাপত্তা পেলে ভোট দিতে যাব। নইলে বাসা থেকেই বের হব না।’
তবে সিএমপি কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, “চট্টগ্রাম বিভাগীয় অঞ্চলের মধ্যে বন্দরনগরী খুব গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। নগরের ৫৯৯টি ভোটকেন্দ্রের অধিকাংশ কেন্দ্রকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে সেভাবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের পরিকল্পনা করছে পুলিশ প্রশাসন।”
তিনি আরও বলেন, ‘যেসব এলাকায় ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানোর শঙ্কা রয়েছে, সেসব কেন্দ্রে বাড়তি নিরাপত্তা জোরদার করা হবে। কেউ অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানোর সুযোগ পাবে না।’
এছাড়া জেলার চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি), চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ), চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড), চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী), চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া), চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া), চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ-সাতকানিয়া), চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) ও চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনের ভোটকেন্দ্রগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা জাগো নিউজকে বলেন, ‘অতীতের সংঘাত, ব্যালট বাক্স ছিনতাই, কেন্দ্রে প্রার্থীদের প্রভাব ও গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে জেলার বাঁশখালী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, ফটিকছড়ি, সীতাকুণ্ড, সন্দ্বীপ এলাকার ভোটকেন্দ্রগুলো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ নিয়ে বিস্তারিত কর্মসূচি নিয়েছে পুলিশ। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ভোটকেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
তবে অপেক্ষাকৃত কম ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই), চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান), চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী), চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) ও চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) আসনের ভোটকেন্দ্রগুলো। তবে এর মধ্যেও বেশ কয়েকটি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে চট্টগ্রামের আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে জেলার ১০ আসন ও জেলা-সংশ্লিষ্ট তিন আসনে ১২টি বিজিবির অস্থায়ী ক্যাম্প তৈরি করা হয়েছে। নগরের তিন আসনে (কোতোয়ালি, ডবলমুড়িং, বন্দর) হালিশহরে রিজিওনাল সদর দফতর থেকে বিজিবির কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
বিজিবির রিজিওনাল কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আদিল চৌধুরী জাগো নিউজকে জানান, নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে চট্টগ্রামের ১৬ আসনে ৭০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন থাকবে। এ লক্ষ্যে মিরসরাই, ফটিকছড়ি, সন্দ্বীপ, সীতাকুণ্ড, হাটহাজারী, রাউজান, রাঙ্গুনিয়ায়, বোয়ালখালী, পটিয়া, আনোয়ারা, সাতকানিয়া ও বাঁশখালীতে ক্যাম্প স্থাপনের কাজ চলছে।