খেলাধুলা

ওয়ানডে সিরিজ হতে পারে বড় রসদ

cricateবিশেষ সংবাদদাতা: টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বাংলাদেশ ভাল দল নয়। টাইগারদের পারফরমেন্স কখনই আশাব্যাঞ্জক নয়। রেকর্ড, পরিসংখ্যানও তাই বলে। এই তো সেদিন আফগানিস্তানের সাথেও নাকাল হয়েছে সাকিবের দল। ভারতের দেরাদুনে আফগানদের কাছে ৩ ম্যাচের সিরিজে চরমভাবে পর্যদুস্ত হয়েছে বাংলাদেশ। ক্রিকেটের সেই সংক্ষিপ্ততম ফরম্যাটে এবার সাকিব বাহিনীর প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ক্যারিবীয়রা ২০ ওভারের ক্রিকেটে বিশ্বসেরা। সেই দলের বিপক্ষে তাদের মাটিতে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ। সব রকম হিসেব নিকেশেই ফেবারিট ব্র্যাথওয়েটের দল।

কিন্তু অধিনায়ক সাকিব আশাবাদী। টাইগার ক্যাপ্টেনের আশাবাদী উচ্চারণ, ‘আমরা টি-টোয়েন্টি সিরিজ নিয়ে আশাবাদী। এর বড় কারণ হলো- আমরা এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজে এসে ওয়ানডেতে ভাল খেলেছি। দেশের বাইরে ৯ বছর পর একদিনের সিরিজ

অধিনায়ক সাকিব একা নন। অনেকেই ওয়ানডে সিরিজের পর টি-টোয়েন্টিতেও ভাল কিছুর আশা করছেন। সেই আশার আলোকবর্তিকা হয়ে জ্বলছে দেশের মাটিতে তিন বছর আগের এক সুখ স্মৃতি। সেটা ২০১৫ সালের ঘটনা। ওই বছর এপ্রিলে বাংলাদেশে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলতে এসেছিল পাকিস্তান ক্রিকেট দল। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে পাকিস্তানকে ‘বাংলাওয়াশ’ করেছিল টাইগাররা। ২০১৫ সালের ১৭, ১৯ ও ২২ এপ্রিল পাকিস্তানকে পরপর তিন ম্যাচে যথাক্রমে ৭৯ রান, ৭ উইকেট ও ৮ উইকেটে হারায় টিম বাংলাদেশ।

ওয়ানডে সিরিজের ওই সাফল্যর ঢেউ গিয়ে লাগে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটেও। ২০১৫ সালের ওই হোম সিরিজে (২৪ এপ্রিল শেরে বাংলায়) একমাত্র টি-টোয়েন্টি ম্যাচেও পাকিস্তানকে প্রথমবারের মত ৭ উইকেটে হারিয়ে দেয় বাংলাদেশ। কাটার মাস্টার মোস্তাফিজ (২/২০) আর সাকিবের (৪ ওভারে ০/১৭) সুনিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের মুখে ১৪১ রানেই আটকে যায় পাকিস্তানিরা।

জবাবে সাকিব আল হাসান ৪১ বলে অপরাজিত ৫৭ আর সাব্বির রহমান রুম্মনের ৩২ বলে অপরাজিত ৫১ রানের জোড়া হাফ সেঞ্চুরি ও ষষ্ঠ উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ১০৫ রানের জুটিতে ২২ বল আগেই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ।

বলার অপেক্ষা রাখে না, ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারানোর পর ২০১৫‘র এপ্রিলের আগে আর কোন ফরম্যাটেই পাকিস্তানের সাথে পেরে ওঠেনি টাইগাররা। ১৬ বছর পর শুধু প্রথম জেতাই নয়। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে পাকিস্তানীদের নাকাল করে তারপর এক ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজও জিতে নেয় মাশরাফির দল।

তখনই বোঝা গেছে ওয়ানডে পারফরমেন্স ও সিরিজ বিজয়ের সুখ স্মৃতিই হয়েছিল ওই একমাত্র টি-টোয়েন্টি ম্যাচ জয়ের অনুপ্রেরণা। তার মানে ইতিহাস ও পরিসংখ্যানও সাক্ষী দিচ্ছে ওয়ানডে সিরিজ বিজয়ের রেশ ধরে টি-টোয়েন্টিতেও ভাল খেলা যায়। ভাল খেলার অনুপ্রেরণা জাগে। আস্থা ও আত্মবিশ্বাস যায় বেড়ে।

ম্যাচ না জিতলেও ওয়ানডে সিরিজে খুব ভাল খেলার পর যে টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ভাল খেলার শক্তি-সাহস জন্মে, তার আরও একটি প্রমাণ আছে। সেটা ২০১৩ সালের অক্টোবর-নভেম্বরের ঘটনা। ঘরের মাঠে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে নিউজিল্যান্ডকে তুলোধুনো করার পর (যথাক্রমে ডিএল মেথডে ৪৩ রান, ৪০ রান ও ৪ উইকেটে জয়) ৬ নভেম্বর শেরে বাংলায় ব্ল্যাক ক্যাপ্সদের বিপক্ষে একমাত্র টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ২০৪ রানের পাহাড় সমান স্কোরের পিছু নিয়েও প্রায় জিতে গিয়েছিল বাংলাদেশ।

তামিম ও সাকিব ছাড়া ২০৪ রানের বিরাট স্কোরের পিছু নিয়ে মাত্র ১৯ রানে তিন উইকেট খুইয়ে বসলেও সাহস হারায়নি টাইগাররা। জয়ের পথেই ছিল। মুশফিকুর রহীম (২৯ বলে ৫০), নাঈম ইসলাম (১০ বলে ১৮), নাসির (২০ বলে ২৮), মাহমুদউল্লাহ (২৫ বলে ৩৪) ও সোহাগ গাজীরা (১৫ বলে ২৪) মিলে জয়ের খুব কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলেন। শেষ দিকে বর্তমান অধিনায়ক মাশরাফি (৭ বলে ৭), রাজ্জাক (এক বলে ০) ও আল আমিন (৩ বলে ৫ রান) একটু মাথা তুলে দাঁড়াতে পারলেই হয়ত জিতে যেত বাংলাদেশ।

না জিতলেও কিউইদের সাথে সমানতালে লড়ার রেকর্ডটি আছে। তার মানে দেখা যাচ্ছে, একটি ওয়ানডে সিরিজে খুব ভাল খেললে, এরপর টি-টোয়েন্টি সিরিজেও ভাল খেলার অনুপ্রেরণা জন্মায়। শক্তি ও সাহস বাড়ে। বাংলাদেশ সত্যিই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অনেক ভাল ক্রিকেট খেলেছে। মাঠের ফল ২-১। পরিসংখ্যানের খাতায়ও তাই লিখা থাকবে। কিন্তু সেটা ৩-০ হতেই পারতো। দ্বিতীয় ম্যাচে যে মাত্র ৩ রানে হেরেছিল বাংলাদেশ। তাহলে হয়তো আত্মবিশ্বাস ও আস্থা আরও বাড়তো। তারপরও যা হয়েছে, সেটাও কম নয়। যথেষ্ঠ।

ওয়ানডে সিরিজের সেই সুখ স্মৃতি, বুকভরা সাহস আর আস্থা-আত্মবিশ্বাস নিয়ে মাঠে নামবে সাকিবের দল। আশা জাগানোর আরও একটি উপাদান আছে। তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে নেই ক্রিস গেইল। বলার অপেক্ষা রাখে না, এখনো এই ফরম্যাটের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর উইলোবাজ এই ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যান। নিজের দিনে যে কোনো বোলিং শক্তিকে দুমড়ে-মুচড়ে দিতে পারেন এ বিধ্বংসী বাঁ-হাতি ওপেনার। তাকে বিশ্রাম দেয়া হয়েছে। গেইলকে মোকাবিলা করতে হবে না- মাশরাফি বিহীন বাংলাদেশের বোলিংয়ের জন্য এটা এক ধরনের স্বস্তি।

যদিও এভিন লুইস আছেন। মারলন স্যামুয়েলস আর দিনেশ রামদিন ফিরেছেন। তাদের অন্তর্ভুক্তিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটিং অবশ্যই সমৃদ্ধ হবে। সাথে সীমিত ওভারের স্পেশালিস্ট ও কার্যকর অলরাউন্ডার আন্দ্রে রাসেলও যুক্ত হচ্ছেন। দেখা যাক সাকিবের নেতৃত্বে সেই দলের সাথে কি করে টাইগাররা?

এমন আরও সংবাদ

Back to top button